আপনি আমাদের কাছে প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসা এক মানুষ
হাসান আরিফ
রণজিৎ দা, আমাকে সারারাত ঘুমাতে দেননি আপনি! গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে আমি আপনাকে ভাবছি। আপনি আমার জীবনে একটা ধূমকেতু।
কেন এই বন্ধনের আলোড়ন এক প্রাক্তন সচিবের সঙ্গে! আমি তো সচিবালয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাই না। সে এক অচেনা জগৎ। মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। ওখানে শুধু পদবির হাঁকডাক। আমি আপনার কাছে আমাদের কাজে গিয়েছিলাম আর আপনি আমাকে আপনার করে নিয়েছিলেন। তারপর আমি আপনার সরকারি পরিচয় ভুলে গিয়ে আপনার কাছে দাদার আশ্রয় পেলাম।
আমার আবৃত্তি আপনার শুনতে ইচ্ছা করলে আপনার ঘরই হয়ে উঠত উপযুক্ত স্থান। তাই আমিও পেয়ে গেলাম অপার সুযোগ আপনাকে জানবার। আপনার জীবনের বাঁধা-বিপত্তি আর আশ্চর্য উত্থানের আখ্যান আমাকে সাহসী করেছে পথ চলায়।
চেনা-জানার প্রথম পর্বেই ভায়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আপনি বিপন্ন হলেন, আমরা শংকিত হলাম। আপনি অসীম মনোবলে উঠে দাঁড়ালেন। মুতু্যুকে হার মানিয়ে জেগে উঠলেন কর্মযজ্ঞে।
কখনও কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা নালিশ ছিল না আপনার। আপনি সহজভাবে সব মেনে নিতে পারতেন। যেমন সড়ক দুর্ঘটনায় রেখে যাওয়া কপালের ক্ষতটা আর লাঠি ভর দিয়ে হাঁটা। আমি আপনাকে কোনো কিছুতেই পরাজিত ভাবতে পারি না। তাই একটা ছবি খুঁজছিলাম যাতে কপালের ক্ষতটা নেই।
দাদা আপনি সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মান করতেন, ভালোবাসতেন। আপনি আমাদের কাছে প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসা এক মানুষ, যিনি শিল্পীদের সৌজন্যের প্রতিযোগিতায় পরাজিত করেছেন বারবার। বিনয় ও সহমর্মিতায় সংস্কৃতিকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা আপনি মোচন করতে চেয়েছেন।
আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা আপনাকে মনে রাখব। আর আপনার লেখায় পাঠক আপনাকে মৃত্যুহীন প্রাণে পরিণত করবেন।
আপনার কথন শ্রোতার শ্রবণে ধ্বনিত হবে, অনুরণিত হবে কালের প্রবাহে।
রণজিৎ দা আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব