রণজিৎ বিশ্বাসের অনুপস্থিতি অপূরণীয়
হাবীব ইমন
মানুষটির সঙ্গে আমার খুব বেশি স্মৃতি নেই। আমি ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ। খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মেশা আমার হয়ে উঠে না। সংস্কৃতি প্রিয় সাবেক সচিব, লেখক রণজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গেও আমার দেখা-সাক্ষাত তেমন একটা হয়নি। হয়তো হয়েছেÑ এক কি, দুইবার। তার সঙ্গে স্মৃতি বলতে জোরাল কিছু না। তখন তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। একটি অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সেই আমন্ত্রণ তিনি গ্রহণও করেছিলেন। তখন তিনি অসুস্থও ছিলেন বেশ। তবু পুরো অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি। আমার হাত ধরে মঞ্চে উঠলেন। চমৎকার বক্তব্য দিলেন। স্মৃতি বলতে ওইটুকুই। হুম, ওই অনুষ্ঠানে অতিথি করতে গিয়ে স্মৃতি বলতে আরও একটু আছে, এটা অপ্রিয় বটে, রণজিৎ বিশ্বাস সম্পর্কে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক, তিনি একজন কবি বটে, প্রধানমন্ত্রী সহপাঠী বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি, তার বিষাদগার কথাবার্তা। আমি কখনও এর ভিত্তি খুঁজে পাইনি।
আমি মূলত, তার লেখার একজন পাঠক। একই সঙ্গে দু-একটি কাগজে আমাদের লেখা ছাপা হয়। আর তার রম্য লেখাগুলো আর পাব না। চলে গেলেন তিনি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। ক্রিকেট খেলাকে ভালোবাসতেন। ক্রিকেট নিয়ে তিনি চমৎকার বিশ্লেষণ করতেন। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জয়ের প্রাক্কালে একটি দৈনিকে তিনি খুব আবেগঘন কলাম লিখতেন। দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে ক্রিকেট নিয়ে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তার রসবোধ ছিল অসাধারণ। একজন আমলা হয়ে লেখালেখি জগতে অনবদ্য হয়ে উঠবেন, ভাবা যায় না! লেখালেখিকে বড্ড ভালোবাসতেন। আমলা লেখকদের ক্ষেত্রে অতটা প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস তাদের লেখায় পাই না। শহীদুল জহিরের কথা একটু ভিন্ন।
অনেক বছর আগের কথা। হঠাৎ খবরের কাগজে দেখলাম, রণজিৎ বিশ্বাসের ছেলে হারিয়ে গেছে। বড় ছেলে। আবারও একদিন খবরের কাগজে পাঞ্জাবি পড়া অশ্রুমন্ডিত ছবিসহ খবর আসলো ছেলেটিকে পাওয়া গেছে। সে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হয়ে গেছে। এক মাদ্রাসা থেকে তাকে পাওয়া গেছে। কেউ বা কারা অপহরণ করে তাকে ধর্মান্তরিত করেছে।
তবুও ছেলেটা ফিরেছে বাবা-মার কাছে। একদিন জানতে পারি, ছেলেটি নেই। মারা গেছে। ছেলেকে এইভাবে হারানোর দুঃখ খুব বেশি বেজেছিল এই সংবেদনশীল মানুষটির মনে। এই শোক উত্তাপের ভিতর দিয়েও তিনি ছিলেন সর্ব অর্থে একজন নন্দন মানুষ। সদালাপী, সদাচারী, শুদ্ধাচারী ও প্রমিত মানুষ।
রণজিৎ বিশ্বাস লেখালেখিতেই ব্যস্ত থাকতেন, তা নয়, অনেক পড়তেনও তিনি। লেখকদের তিনি ভালোবাসতেন, সম্মান করতেন। তরুণ লেখকদের প্রতি তার অনুভব ছিল আলাদা। উৎসাহ দিতেন তাদের। রণজিৎ বিশ্বাসের প্রয়াণে অনেকের অনুভূতিতে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
তার অনুপস্থিতি অপূরণীয়। তার প্রতি আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন