বাবাকে নিয়ে কিছু লেখা হলো না আমার
ফেরদৌসি ডলি
সিলেট সরকারি অগ্রগামী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়। বিশাল বড় আয়তনের স্কুল। অনেক বিল্ডিং, একাধিক মাঠ, মেয়েদের হোস্টেল, শিক্ষকদের বাসা। সেখানকার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আমি। একটু জড়সড় হয়েই থাকি। বড় বড় আপুদের দিকে তাকিয়ে দেখি। আর ভাবি তারা কে কোন ক্লাসে পড়ে। একদিন ক্লাসে বাংলা শিক্ষক বললেন, আমাদের স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য ছড়া, কবিতা, গল্প যে যা লিখতে চাও লিখে (একটি তারিখ বলেছিলেন) জমা দিবে। আমার বন্ধু ফারাদিবা বলল, সে একটা ছড়া লিখবে। আমি বললাম, আমিও লিখব, বাসায় ফিরে বিকেলে যথারীতি খেলতে চলে গেলাম। সন্ধ্যায় পড়তে বসেই মনে পড়ল ছড়া লেখার কথা। তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করলাম। হোমওয়ার্ক করলাম। এবার ছড়া লিখব। কিন্তু কিভাবে লিখব? অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, লাইনগুলো মেলাতে হবে। পাখি, ব্যাঙ, ফুল অনেককিছু নিয়েই চেষ্টা করলাম। দুইলাইন পর আর মেলাতে পারি না। রেখে দিলাম। পরদিনও একই অবস্থা। তবে স্বস্তি এই, ক্লাসে কেউ এখনও কিছু লিখে জমা দেয়নি। ভাবলাম আজকে বাবাকে বলে দেখি। যথারীতি রাতে পড়া শেষ করে বাবাকে বললাম, বাবা, আমাদের স্কুলে ছড়া, কবিতা লিখতে বলেছে ম্যাগাজিনের জন্য। বাবা বললেন, ভালই তো লেখ। তখন আমি বললাম, বাবা আমি তো নিজে নিজে পারছি না। বাবা বললেন, ঠিক আছে আমি হেল্প করছি, তুই কাগজ নিয়ে আয়। আমি বাসার খাতার পেছনের পৃষ্ঠা এগিয়ে দিলাম। বাবা লিখলেন,
আমার দাদা বাঙালি
মস্ত বড় পালোয়ান।
নাম তার মুজিব।
করলেন বাঙালিকে সজিব।
দেশে দেশে পড়ে সাড়া,
ধন্য মুজিব ধন্য মুজিব।
আমি সেই ছড়া দেখে দেখে আরেকটি কাগজে লিখলাম। ভাঁজ করে স্কুল ব্যাগে রেখে দিলাম। পরদিন স্কুলে গেলাম। কিন্তু কাউকে বললাম না, আমিও একটা ছড়া লিখেছি। বরং ভয় হচ্ছিল শিক্ষক দেখেই হয়তো বুঝবেন এটা আমি লিখিনি। অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন। বাসায় এসে ব্যাগ থেকে বের করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলাম। দুই, তিনদিন পর বাবা জানতে চাইলেন আমি ছড়া জমা দিয়েছি কিনা। আমি বললাম, না। বাবা হেসে বললেন, ভয়? আমি শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
যখনই পড়াশোনার বাইরে কিছু লিখতে বসি তখনই বাবাকে মনে পড়ে।
বাবা দিবস চলে গেল। বাবাকে নিয়ে কিছু লেখা হলো না আমার!
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন