মানসিক চাপে নারী ও পুরুষ
জুলফিয়া ইসলাম
নারী ও পুরুষের পার্থক্যের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তাদের উভয়ের সমানুপাতিক জনসংখ্যা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পুরুষরা নারীদের চেয়ে সামান্য কিছু এগিয়ে আছে। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পুরুষের স্বাস্থ্য নারীদের তুলনায় একটু খারাপ। এছাড়াও পুরুষের কর্মক্ষেত্রের কারণে কিংবা অন্যান্য নানাবিধ কারণে পুরুষদের মৃত্যুহার কিছুটা বেশি। এছাড়া একটি প্রাচীন মতবাদ চালু আছে ‘নারী এবং শিশুর অধিকার সর্বাগ্রে।’
বিশ এবং ত্রিশ দশকের একটি পরিসংখ্যানে ইউএস আদমশুমারিতে দেখা যায়, প্রত্যেক ১১৫ জন পুরুষের বিপরীতে আছে ১১৫ জন কুমারী নারী। অথচ ৪৫ থেকে ৬৪ বয়স সীমার মধ্যে প্রত্যেক ১০০ জন নারীর বিপরীতে আছেন মাত্র ৬৯ জন পুরুষ। পুরুষের তুলনায় নারীরা আশীর্বাদ ধন্য হয়ে টিকে থাকে। অর্থাৎ নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করাটা অধিক নিরাপদ। ইউসিএলএ এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ মানসিকতা হলো ‘যুদ্ধ কর অথবা পালাও’। কারণ সমস্যার সম্মুখীন হওয়া পুরুষদের চিরায়ত নিয়ম। মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিপদ ও সমস্যা মোকাবেলায় নারীরা হার মানে অথবা ধরা পড়ে। মেয়েদের এই মানসিকতাকে লেখক ‘গেল বের্কোউজ’-এর লেখা উটনি ম্যাগাজিনে, ‘আঁচ করতে পারা এবং বন্ধু হয়ে যাওয়া’ বলে উদ্বৃত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের সময় নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়। দেখা গেছে, পুরুষ হরমোন টেস্টোটরন পূর্বোক্ত হরমোন অক্সিটোসিন এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আর নারী হরমোন এস্ট্রোজেন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এ কারণে মেয়েরা মানসিক চাপের সময় শিশুদের যতœআত্মি করে কিংবা অন্য কোনো মহিলার সাহায্য নিয়ে থাকে। অন্য মহিলাদের সহচর্যে অক্সিটোসিন আরও বেশি বেড়ে যায়। এর ফলে মেয়েরা মসৃণ অনুভূতি এবং শান্ত মেজাজ দিয়ে সবকিছু সামাল দিয়ে থাকে।
তাহলে এটা প্রমাণিত হলো, পুরুষরা চাপের মুখে সমস্যার সমাধান করতে পারে না আর তাই তারা সমস্যাকে এড়িয়ে যায়। আর ওই সময় মহিলারা সে সমস্যার মোকাবেলা করে থাকে। এটা আশ্চর্যজনক, মেয়েদের তুলনায় বিশ এবং ত্রিশের কোঠার অবিবাহিত পুরুষ যখন পঞ্চাশ এবং ষাট বছরে উপনীত হয় তারা অধিকাংশই মারা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষরা স্বভাবতই এরকম। এটি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় না। অপরপক্ষে, মহিলারা খুব সুন্দরভাবে এসব সমস্যার সমাধান করে থাকে। নারী পুুরুষের অনুপাত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সংক্রান্ত তথ্য হলো এই, যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে নারীশিশুর তুলনায় পুরুষশিশুর জন্মহার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। হেলেন ভামবর্গ সর্বপ্রথম এই বিষয়ের ওপর ধারণা দেন, কোনো বড় যুদ্ধের আগে পুরুষশিশুর জন্মহার বৃদ্ধি পায়। পুরুষশিশু বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ ধরা হয় এই জন্য, যুদ্ধের সময় পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি নিহত হয়ে থাকে। নারী পুরুষের জন্মের সংখ্যাচিত্র ভবিষ্যত যুদ্ধ বিগ্রহ এগুলোকে প্রভাবিত করে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন