অবৈধ বাংলাদেশিরা নতুন সংকটে যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তার পথে ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কাগজপত্রহীন ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন এর কার্যকারিতায় সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের বৈধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর রইল না।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন করে আইন সংস্কার করা উচিত যেন, অভিবাসীদের তীর্থভূমি মার্কিন মুল্লুক থেকে কাউকেই বহিষ্কার হতে না হয়। কিন্তু সেটা করা না হলে কাগজপত্রহীন ওই সব বাংলাদেশিরা গভীর সংকটে পড়বেন। এই নিয়ে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। ওবামার আদেশের পর তাদের মধ্যে যে আশা জেগেছিল এখন তা নিভতে বসেছে। হিলারি ক্লিনটন আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এই ব্যাপারে নতুন সমাধান আসতেও পারে বলে তারা আশাবাদী। তবে এখনও কেউ নিশ্চিত নন শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে কোন দলের প্রার্থী জয়ী হবেন।
ওবামা প্রায় ১১ মিলিয়ন কাগজপত্রহীন (আনডকুমেন্টেড) অভিবাসীকে বৈধতা বা আত্মীকরণ করে নেওয়ার যে নির্বাহী আদেশ দেন সেটির কার্যকারিতায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৩ জুন বৃহষ্পতিবার আদালত বিভক্ত রায় দিয়েছেন, যেখানে নির্বাহী আদেশের পক্ষে ৪ জন বিচারক আর বিপক্ষে ৪ জন বিচারকের অবস্থানের কারণে আপাতত থমকে গেল ওবামার নির্বাহী আদেশ। আদালতের এ রায়ে অভিবাসীর দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঐহিত্য বড় প্রতিবন্ধকতায় আবর্তিত হলো বলে ক্ষোভ ঝেড়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
নিউইয়র্ক থেকে এনা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩২ কোটি জনসংখ্যার বাইরে আরও প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ আছেন যাদের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাসের কোনো কাগজপত্র নেই। অথচ তাদের পরিবার-পরিজন বেড়েছে, জন্ম নেওয়া সন্তান-সন্ততিও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বড় হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা এই বিশালসংখ্যক মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার জনজীবনে ফিরিয়ে নিতে চায় ডেমোক্র্যাট দল। কিন্তু কট্টর বিরোধী অবস্থানে রক্ষণশীল রিপাবলিকান রাজনীতিকরা। সেই বিরোধিতায় সিনেটে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৩ সালে একটি ঐতিহাসিক নির্বাহী আদেশ দেন। সেই আদেশে, কাগজপত্রহীন ১১ মিলিয়ন মানুষের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, সে নির্বাহী আদেশের কার্যকারিতার ব্যাখ্যা চেয়ে আদালতে যায় রিপাবলিকানরা।
প্রেসিডেন্ট ওবামা এই রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ’৭০ সালের পর, এ বছর সর্বনিম্ন সংখ্যাক মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকেছে এই দেশে। এসব আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে কেননা, দেশে থাকা সকল মানুষ যেন তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে। কিন্তু আইন তাদের কথা বলছে না। তিনি বলেন, আপাতত চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই, তবে আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সুবিধা আর সুযোগ দেওয়া দরকার, সেগুলো সবই অবারিত থাকবে।
অভিবাসনসংক্রান্ত এই নির্বাহী আদেশে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে স্থিতাবস্থা দিলেও আদালত এই মর্মে বাণী দিয়েছে যেÑ যুক্তরাষ্ট্রের মৌলভিত্তি অবশ্যই জাতি এবং গোত্রের বৈচিত্র্য। সেই বৈচিত্র্য বজায় রাখার পক্ষে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সব শিশুর মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে পূর্বের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এ পর্যবেক্ষণে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিবাসনসংক্রান্ত এ নির্বাহী আদেশ আদালতে আটকে যাওয়ায় এর প্রভাব কেমন পড়বেÑ তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব কতখানি পড়তে পারে সেসব নিয়ে আলোচনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা কম, তাই খুব বেশি সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে না। তবে যেসব অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের বৈধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর রইল না।
এমনও অনেক উদাহারণ আছে যে, দুই দশকের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার পরও কাগজপত্র না হওয়ায় দেশে ফেরত গেছেন অনেক বাংলাদেশি। এখনও যাচ্ছেন অনেকেই। কেননা, তারা আশা করেছিলেন অভিবাসীবান্ধব প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে তাদের একটা না একটা গতি হবে। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট কতৃক প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়ন ঝুলে যাওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশিরা।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলছেন কেউ কেউ। দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের স্বপক্ষে সোচ্চার অলাভজনক সংগঠন ড্রাম-এর অর্গানাইজিং ডিরেক্টর কাজী ফৌজিয়া মনে করেন, নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যাওয়ায়ই এক্ষেত্রে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ভাগ্য ফেরানোর ক্ষেত্রে একমাত্র নিয়ামক হতে পারে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী