অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা দুর্নীতিরোধ ও সুশাসনের সঙ্গে বাজেটে ধনীদের প্রতি কর বৃদ্ধি দাবি
কালাম আজাদ : দুর্নীতিরোধ ও সুশাসনের সঙ্গে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের কাছ থেকেই অধিকহারে কর আদায়ের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এ মত দেন তারা। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি।
সভাপতির বক্তব্যে সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ জলিল বলেন, বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ রয়েছে। সে অনুযায়ী বাজেটও প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সক্ষমতাসহ নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে আমাদের যতটা প্রত্যাশা, ততটা প্রাপ্তি হচ্ছে না। শেষ হতে যাওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের হিসাব অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তা নাকচ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এনবিআরের কর্মকর্তারা নিজেদের পকেটে অর্থ পুরে সরকারকে বঞ্চিত করছে। ফলে যেখানে দুর্নীতিরোধ ও সুশাসন থাকবে না; সেখানে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ড. এম এ জলিল বলেন, গরিবকে বঞ্চিত করে অর্থ ও সম্পদের মালিক হচ্ছেন ধনীরা। গত কয়েকদিন আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী কালো টাকার ব্যাপারে সরাসরি কোনো কথা না বললেও এখনও তা সাদা করার সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে এম এ জলিল বলেন, এতে দুর্নীতির সুযোগ থেকেই যাচ্ছে, উৎসাহিত হচ্ছেন দুর্নীতিবাজরা। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর কথা উল্লেখ করে এম এ জলিল বলেন, সবাই জানে তিনি দুর্নীতিবাজ। অথচ তাকে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। দেশের উন্নতি চাইলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৩০ বছরে চীনের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান নিয়ামক হলো এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট)। কিন্তু আমাদের তা এখন অনেক কম। দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থ বিপুল পরিমাণে রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে আনা দরকার। না হয় এসব ব্যবসার অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে তিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য শুধু অনুন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি নয়; উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ দেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার বেনজামিন ডি কস্টা বলেন, দুর্নীতি কমলে উন্নয়নের স্থায়িত্ব বাড়বে। পাশাপাশি তিনি রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের ময়লা-আবর্জনা দূরীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম বলেন, আসলে বাজেট অনেক বড় নয়। কারণ জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় এ বাজেটকে আমরা অনেক বড় কিছুতেই বড় বলতে পারি না। এ সময় তিনি সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনে এনবিআরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিরোধ জরুরি মন্তব্য করেন তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে বাস্তবায়ন করবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু বাজেট অনেক বড় না হলেও তা কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না এটাই এখন বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম বলেন, নারীদের উন্নয়নে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। শুধু নারীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই হবে না। তা বাস্তবায়নে সরকারকে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. প্রিয়বত পাল বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার কারিকুলাম আরও উন্নত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের যাতে আর একটিও মেধাপাচার না হয়, সেজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু কর্মসংস্থানের দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি আমাদের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সরদার সৈয়দ আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রণোদনা নেই এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিরও কোনো দিক নির্দেশনা নেই। গত কয়েক বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি। তিনি তার বক্তব্যে নির্মাণ ও আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাত নিয়ে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন।
আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও নটরডেম কলেজের শিক্ষক রণজিত কুমার নাথ ও ড. এ কে এম নজরুল ইসলাম। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম