স্ত্রীকে হত্যা করলেন জর্ডানের বাদশা
ইমরুল শাহেদ : জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ রোমে তার স্ত্রী রানিয়াকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে এডব্লিউডি ডটকম নামে একটি অনলাইন পোর্টাল। তাতে বলা হয়, তার স্ত্রী অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ নিয়ে দেশেই কানাঘুঁষা চলছিল। হত্যার পর তাকে দাফনও করা হয়েছে গোপনে।
অনলাইন পোর্টালটির বর্ণনা থেকে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে জর্ডানের রাজকীয় বোয়িং বিমানে করে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ফিউমিচিনো বিমানবন্দর থেকে রানি রানিয়ার মৃতদেহ জর্ডানে নেওয়া হয়। তিনি চার সন্তানের জননী। জর্ডান রয়াল আদালতের প্রধান ফয়েজ তারোনেহ জর্ডানের এই সুন্দরী রানির আকস্মিক মৃত্যু নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তারোনেহ শুক্রবার মস্কো টাইমসকে বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে রোমের এক্সসেলসিয়র হোটেল কক্ষে রানিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে জর্ডানের বাদশা কষ্ট পেয়েছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বাদশাহর বিনা অনুমতিতে রোমে চলে গিয়ে তিনি দীর্ঘ বৈবাহিক জটিলতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন।’
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মৃত্যুর এই অশুভ সংবাদটি ৭০ লাখ মানুষের এই জাতিটির সামাজচিত্রকেই প্রতিফলিত করে। এই জাতিটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে রয়েছে স্থানীয় জর্ডানিরা। আরেক ভাগে রয়েছে প্যালেস্টাইন থেকে আসা শরণার্থীরা। রানি হলেন এই শরণার্থী গাত্রের একজন। রানি রানিয়ার যখন তার স্বামীর শাসনের পক্ষে কথা বলছিলেন তখন জর্ডান জুড়ে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে যায় যে, তার জীবনের একটা গোপন দিক আছে, যা সবার কাছে অজানা রয়েছে। রানিয়া নাকি জীবনের একটা সময় ব্যয় করেছেন হলিউডে। তার দেশের নিয়ম নীতির সঙ্গে সেটা ছিল একেবারেই বিপরীত।
ল-নভিত্তিক জর্ডানের সাবেক আদালত কর্মকর্তা ড. ওডে আল-শানা মনে করেন, এই সময়ে আইরিশ গায়ক ও জনসেবক বুনো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিলেন। ওডে আল-শানা বলেন, ‘বুনোর পঙ্কিল মোহ একজন দেবীকেও ফাঁদে ফেলতে পারে। এজন্য রাজ পরিবারে ভাঙ্গন ধরতে পারে। আর এটাই আমাকে কষ্ট দেয়। জর্ডানের ভিন্নধর্মী ও দ্বিমেরু সমাজের ভাগ্যই বলতে হবে এটাকে।’ তবে এই ঘটনাটি জর্ডান জাতির জন্য বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জর্ডানী নাগরিক বলেছেন, ‘এই ঘটনা আমাদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। স্বামী ছাড়া একজন আরব নারি কিভাবে একজন আইরিশ গায়কের ভিডিও প্রোডাকশনের অশ্লীল দৃশ্যে থাকতে পারেন। আমরা সেটা মেনে নিতাম তিনি যদি অবিবাহিত হতেন। তিনি সুইডেনের রানিও হতেন তাহলেও এই নিয়ে সংকট দেখা দিত। এছাড়া এমন কি ঘটনা ছিল তারা দুজনই একই সময়ে একই হোটেলে অবস্থান করছিলেন। স্বামী ছাড়া তিনি একাকী হোটেলে কি করছিলেন, যেখানে বুনো রয়েছেন। তিনি যদি রোম সফরে গিয়ে থাকেন সেটা কেন গণমাধ্যমে গোপন রাখা হলো। রমজানের পবিত্র মাসে তিনি রোম গিয়েছিলেন কেন। তিনি আমাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে কলুষিত করেছেন।’
রানিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে বাদশা আবদুল্লাকে জড়িয়ে জর্ডানের সুশীল সমাজের অনেকেই বিবৃতি দিচ্ছেন। জর্ডানের প্রধান বিরোধী দল নিউ জর্ডান পার্টির রায়েদ খাম্মাস বলেছেন, ‘জর্ডানের সবাই জানে যে, প্রয়াত রানি এবং তার স্বামী পরস্পরের প্রতি অনুগত ছিল না। আমরা ইচ্ছা করলেই আমাদের দেশের নৈতিক দুর্নীতি প্রকাশ করতে পারি এবং সেগুলো যথাসময়ই প্রকাশিত হবে। আমরা মনে করি রানিকে যেভাবে গোপনে দাফন করা হয়েছে, বাদশা সেভাবেই তার গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে রোমে রানিয়াকে হত্যা করেছে।’ সম্পাদনা : সুমন ইসলাম