বাবুল আক্তারবিষয়ক গোয়েবলসরা ও সামাজিক মিডিয়া
অজয় দাশগুপ্ত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আমি মিডিয়া মনে করি না। আনএডিটেড বা অসম্পাদিত কোনো মিডিয়া হতে পারে না। এগুলো অনেকটা দেয়ালিকার মতো। কবি কিশোর সুকান্ত যেমন লিখেছিলেন ‘দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা…’। সোশ্যাল মিডিয়া নামে পরিচিত মাধ্যমগুলো জনমত তৈরি করলেও এগুলো আসলে ব্রেকহীন গাড়ির মতো। সবসময় সাবধান থাকতে হয় যেন কোথাও গিয়ে ধাক্কা না মারে। কবিতা, পদ্য, গদ্য লেখা ঠিক আছে, সমস্যা হলো রাজনীতি বা সামাজিক বিষয়গুলো। এগুলোর নেগেটিভ রেজাল্ট নিয়ে মাথাব্যথার সময় এখন দোরগোড়ায়।
তার আগে বলে নিই, উস্কানিদাতা কিন্তু রিয়েল বা এডিটেড মিডিয়া। গত দুদিন ধরে একটি ওয়েব পোর্টাল ও দৈনিকের আপডেট নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে আমাদের জীবনে। দেশে উন্নয়ন অগ্রগতির পাশাপাশি হত্যা, খুনও চলছে সমানে। এই অপপ্রক্রিয়ার নির্মম শিকার পুলিশসুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার। মহিলার পোশাক ও অবয়বে নির্মল প্রশান্ত একটা ভাব ছিল। তার হত্যাকা- এটাও প্রমাণ করেছে হিংস্রদানব মৌলবাদের কাছে নারী ও ধার্মিকতার আসলে কোনো গুরুত্ববহন করে না। গত দুদিনে সে জায়গাটা বিনষ্ট করার চক্রান্ত চলেছে।
বাবুল আক্তারকে যে কারণেই নিয়ে যাওয়া হোক, গুজবের ডালপালা থেমে থাকেনি। খেয়াল করবেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল মিতুর চরিত্রহনন। সঙ্গে সফল জঙ্গিরোধক বাবুল আক্তারকে বিতর্কিত করে ফেলা। এমন এক সমাজ ও দেশ আমাদের, একবার কিছু রটানো হলে তা থেকে একজীবনে বের হওয়া যায় না। এটা বোঝা কঠিন না, কারা এঘটনা ঘটাতে পারে। একটা কথা বলা দরকার, একজন পুলিশসুপারের এত খবর পাবলিক হয় কিভাবে? তার জীবন সংসার চলাফেরা পরিবারের হাঁড়ির খবর বের করে তাকে ও পরিবারকে অনিরাপদ রাখার নাম গণতন্ত্র? আর এটা মিডিয়ার দায়িত্ব? বাবুল আক্তার সরকার ও রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পর, জঙ্গি বা সন্ত্রাস দমনে নিয়োজিত থাকার পরও তার জীবন খোলাখাতার মতো হওয়া উচিৎ। অকার্যকর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেরটা বোঝেন, এটুকু বোঝেন না?
দুদিন ধরে যেসব এডিটেড মিডিয়া গুজব ছড়িয়ে বাবুল আক্তারকে প্রশ্নবিদ্ধ করল, তার নিহত পতœীর কোমল মুখ ও হিজাবকে আক্রমণ ও সন্দেহের মুখে ফেলল, তাদের সন্তানদের সামনে বিশাল প্রশ্ন ও সামাজিক সমস্যার ঢাকনা খুলে দিল, তাদের বিচার না হলে বুঝতে হবে সরকার নিজেই ক্লিয়ার না। যারা নিজেদের পুলিশ অফিসার ও তার পরিবারকে সুরক্ষা দিতে পারে না তারা জনগণের সুরক্ষা দেবে কিভাবে?
মানুষের মনোবল ও মানসিক ভারসাম্য বিনষ্টের দিকটাও জরুরি। যারা এসব গুজব রটিয়েছিলেন তারা অত বোকা নন। তাদের এখানেই থামাতে হবে। যোগ্য ও উপযুক্ত শাস্তি তাদের প্রাপ্য।
এটাও বলি হে মানুষ, হে বাঙালি, হে বাংলাদেশি উতলা হয়ো না। ধীরে বও ফেইসবুক। ধীরে চলো মতামত। রক্তের দাগ শুকানোর আগেই রক্ত নিয়ে হোলিখেলা বন্ধ করো। জীবনকে জীবনের মতো চলতে দাও। সবকিছু নিয়ে বলা বা লেখার অধিকার নেই কারও।
আমি গুজব রটনাকারীদের শাস্তি চাই। দেশ ও সমাজের কল্যাণে গোয়েবলসের বিচার জরুরি। না হলে, সুস্থ সমাজ হবে না হতে পারে না।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন