কষ্ট হয় ওর জন্য
হাবীব ইমন
ওর বয়স কত হবে, আমার সমান কিংবা আমার চাইতে কিছু বড় হবে হয়তো। এখনও তরুণ বয়স ওর। একদিন ওর চোখে দেখেছিলাম স্বপ্ন, সৃজনশীলতার স্বপ্ন। নান্দনিকতার স্বপ্ন। ওর চোখে চোখ রেখে আমিও আপ্লুত হয়েছিলাম। ওকে সম্মান করলাম। ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা রাখলাম। কিন্তু ওর স্বপ্ন সৃজনশীলতার উৎকর্ষতা নয়, ওর স্বপ্ন আসলে সৃজনশীলতা-নান্দনিকতার উৎকর্ষতার খোলসে ফাঁদ তৈরি করা। এ ফাঁদে কেউ কেউ পড়ে যাচ্ছে।
একদিন ওকে বলেছিলাম, ‘বিশ্বাস একবার নষ্ট হয়ে গেলে ফেরত পাওয়া যায় না।’ সে এ কথাটি ধারণ করতে পারেনি। সম্ভবত বিশ্বাসের মূল্য কী জিনিস, তা সে জানে না। একেক সময় একেক রকম কথা বলে। নয়-ছয় বোঝায়। এরশাদের মতো অনেকটা হয়তো, ‘সকালে এক কথা, বিকালে এক কথা’। সেও অবশ্য এরশাদের অঞ্চলেরই লোক। কথা এবং কাজের মধ্যে তার ভিতরেও অনেক ফারাক, ওর মধ্যে এটা দিনকে দিন প্রকাশিত হচ্ছে। দুইদিন আগে ভুক্তভোগী একজন তাকে ফোন করল। কিন্তু সে না ধরে, মেসেজ করে বলল পরে কল করছি, কিন্তু আর করেনি। এটা হচ্ছে তার একধরনের অপরাধমূলক পলায়নপরতা।
কমিটমেন্ট হচ্ছে একজন মানুষের নৈতিক পরিচয়। অবশ্য স্থলন এতটা যে এ নৈতিকতার ধার এরা ধারে না। এইভাবে একদিন হয়তো তার বাড়ি হবে, গাড়ি হবে। আমাদের সমাজে এদের মতো ‘ব্যাটার দুমুখো’ স্বভাবের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরাই হচ্ছে সমাজের হর্তাকর্তা। মাঝে মাঝে যখন এদের ভালো কথাগুলো দেখি, ভীষণ প্রমোদিত হই, চরিত্রের স্ববিরোধিতা দেখি, বিস্মিত হতেও ভুলে যাই।
এ পেশার আগে তার একটা পরিচয় ছিল। ওই পরিচয়টা ওর এখন লজ্জার। সেই পরিচয়টা ছিল অনেক মহান। এখন আর তার সঙ্গে যায় না।
মানুষ ভদ্রতার খাতিরে এদের কিছু হয়তো বলে না। মানুষ বোঝে না, মানুষ দুর্বল, এরকম ভাবাটা তার জন্য হবে চরম বোকামি। এদেশের মানুষ হতে পারে খুব সরল। হতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা ফ্যাসাদে যেতে চায় না। এরা ভাবে এটা সরলতা, সুযোগটা বুঝে নেয়। কিন্তু শেষ কথা বলে মানুষই। মানুষ সংক্ষুব্ধ হলে এই দম্ভের অবশ্যই বিনাশ হয়।
কষ্ট হয় ওর জন্য, করুণা হয় ওর জন্য।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন