মাদকের বিষাক্ত ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ
অহিদ উদ্দিন মুকুল, নোয়াখালী : নোয়াখালীতে মাদকবিরোধী সভা-সেমিনার ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য আটক ও এলাকার মসজিদ-মন্দির-গির্জায় মাদক সেবনের কুফল, অপব্যবহার ও মাদক পাচাররোধে জনসাধারণকে সচেতন করার পরও কোনোক্রেমই রোধ করা যাচ্ছে না মাদক সেবন ও পাচার।
বরং নিত্য-নতুনভাবে মাদকের থাবায় লীন হচ্ছে স্কুলপড়–য়া ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এতে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। এখনই শক্ত হাতে এর লাগাম টেনে না ধরলে ধ্বংস হয়ে যাবে যুবসমাজ। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে সভা-সেমিনারে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন সমাজ।
মাদকের বিষাক্ত ছোবলে নাকাল জেলার বিরাট একটি অংশ। মাদক সামগ্রীর এমন কোনো উপাদান নেই যা এ জেলায় পাওয়া যায় না। হেরোইন, ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবাÑ কি নেই? হাত বাড়ালেই সব পাওয়া যায়। সহজলভ্য এসব উপাদান সরবরাহে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। প্রকাশ্য এবং গোপনীয় এমন কিছু স্থান আছে যেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকের বিরাট একটা চালান এসে মজুদ হয়।
গত কিছুদিন আগে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, দেশের ৫১টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে মাদক ঢুকছে। ছড়িয়ে পড়ছে তা রাজধানীসহ সবকটি শহরে। সেখান থেকে এ মাদক যাচ্ছে পাড়া-মহল্লা আর গ্রামগঞ্জে। দেশজুড়ে মাদক সিন্ডিকেটের ছড়িয়ে থাকা শক্তিশালী জালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক।
তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবাধে অনুপ্রবেশ ঘটছে মাদক উপাদানের। আর এসব মাদক উপাদান নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা বেশ প্রভাবশালী। কথিত এই প্রভাবশালী রথি-মহারথিরা সবসময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশি অভিযানে যারা ধরা পড়ে তারা নেহায়েৎ বহনকারী মাত্র। আর ধৃত ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে কথিত বড় ভাইয়েরা পর্দার আড়ালে থেকে দেন-দরবার শুরু করেন। আজ থেকে দেড়দশক আগে নোয়াখালীতে শুধু চোলাই মদ আর গাঁজা পাওয়া যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনের ছোঁয়ায় এখানকার মদ্যপায়ীরা এখনো সনাতনী স্বাদ নেবে কেন? কারণ এখন নিত্যনতুন সব মাদকই তো হাতের নাগালে।
বর্তমানে যুবসমাজের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে ইয়াবার নীল থাবা। দিন দিন কাবু হয়ে যাচ্ছে এই জেলার ছাত্র ও যুবসমাজ। জেলার একাধিক এমপি মাদকের বিরুদ্ধে কাঠোর অবস্থানের কথা জানালেও দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষ করে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের এমপি আলহাজ্ব একরামুল করিম চৌধুরী ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের এমপি আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ কিরণ এবং জেলা প্রসাশক বদরে মুনির ফেরদৌস প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন।
এদিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সভা-সেমিনারেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন তাদের কার্যক্রম। প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় না আনার ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট। জেলার সচেতন মহল দেশের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যুবসমাজকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে দ্রুত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোর জোর দাবি জানিয়েছেন।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায়- জেলা শহর মাইজদীসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরণ নেশা মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল। সাম্প্রতিক সময়ে এ নেশায় যোগ হয়েছে যৌন উত্তেজক ইয়াবা। অল্পপুঁজি, ক্ষুদ্র ট্যাবলেট জাতীয় বলে পরিবহনে সুবিধা হওয়ায় একশ্রেণীর যুবসমাজ ঝুঁকে পড়ছে ইয়াবা ব্যবসার দিকে। আর হাতের কাছেই পাওয়ার কারণে যুবকরা সহজেই ইয়াবা সেবনে আসক্ত হয়ে উঠছে। ফলে নেশার টাকা যোগাড় করতে তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকা-ে। আর মাদকের শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ হয় বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনী থেকে।
জেলার প্রায় দুই শাতাধিক স্পটে বিক্রি হয় মরণ নেশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
এ ব্যাপারে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি থানা-পুলিশও অনেক সময় মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। কোথাও মাদক বিক্রির খবর পেলে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করি।