মরার পথে মৃত সাগর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে জর্ডান এবং ইসরায়েলের সীমান্তে অবস্থিত মৃত সাগরের পানি এতটাই ঘন যে তাতে রীতিমত বসে থাকা যায়। কিন্তু সেই মৃত সাগর দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এবং সত্যি সত্যিই মরতে বসেছে মৃত সাগর। খবর বিবিসি বাংলা। সেখানকার পানিতে এভাবে ভেসে থাকার আগ্রহেই সেখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক পাড়ি জমান। তিরিশ বছর আগে ইজরায়েলের এনগেডি রিজোর্টটি তৈরি হয়েছিল। তখন মৃত সাগরের পানি ছিল সেটির দেয়াল ঘেঁষে। দ্য রিপোর্ট
কিন্তু ৩০ বছর পর এখন এই সমুদ্র এত সঙ্কুচিত হয়ে গেছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার। তাও তাদের জন্য তৈরি এক বিশেষ ট্রেনে পাড়ি দিতে হয়। তবে মৃত সাগরের মৌলিক গুণাবলী এখনো অটুট রয়েছে। চাইলে তাতে ভেসে ভেসে বই পড়া যায়। ইউক্রেন থেকে আসা পর্যটক নাতালিয়া বলছেন তার এত দীর্ঘ যাত্রা বৃথা নয়।
তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো এই কাদামাটি ব্যবহার করিনি। আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমার মনে হচ্ছিলো কোনো এক শক্তি আমাকে আকাশের দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’ বেশ কয়েক বছর হলো মৃত সাগরের আশেপাশের চেহারা খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গতবছরও এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গা, দোকানপাট সহ আরো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিল। কিন্তু এখন তার কিছুই আর বলতে গেলে নেই। কারণ পুরো এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে সিংকহোল। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া মাটির গর্তে দেবে যাচ্ছে পুরো ভবনও। সিংকহোলের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গিডিবেয়ার বলেন, ‘এটি খুবই নাটকীয় ঘটনা এবং দুশ্চিন্তারও বিষয়। বিশেষ করে যারা এই সৈকতের ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করত তাদের জন্য।’
গত কয়েক বছরে পুরো এলাকায় কয়েক হাজার চোরাবালির মতো সিংকহোলে দেবে গেছে প্রচুর স্থাপনা। তিনি বলেন, ‘অতীতে ভূতত্ত্ববিদরা প্রাচীন চিহ্ন দেখে বোঝার চেষ্টা করতো যে এসব সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়। এখানে আমরা চোখের সামনে দেখছি যে সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়।
একজন ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে এটি দেখতে পারা এবং এ নিয়ে গবেষণা করতে পারাটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।’
কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সি’র?
কারণটা হলো জর্ডানের যে নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যদিও এই সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা আছে।
লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করা।
যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল।
তবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠি ইকোপিসের সালাম আব্দুর রহমান বলছেন, এই অর্থ ব্যয় করাটা যুক্তিসঙ্গত।
তিনি বলেন, ‘ডেড সি সুন্দর কি না সেটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা মনে করি ডেড সি হচ্ছে জীবনধারণের অবস্থার একটি নির্দেশক। এই অঞ্চলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, ডেড সি তারই নিদর্শন। যে কারণে ডেড সি রক্ষা করতে পারলে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যে আমরা আমাদের পরিবেশের রোগ সারিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলছি।