চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে ২৮ বছর আগে শেখ হাসিনার সমাবেশে পুলিশের গুলির মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে এ মামলার ৩৭তম সাক্ষী হিসেবে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
মোশাররফ হোসেন তার জবানবন্দিতে বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেদিন গুলি চালানো হয়েছিল। উনাকে লক্ষ্য করে চালানো গুলি ভাগ্যক্রমে গায়ে লাগেনি।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের আদালত ভবনে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আসা নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে ২৪ জন নিহত হন।
মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, সেদিন ‘বিনা উস্কানিতে পরিকল্পিত হত্যাকা-’ ঘটানো হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন জানান, তিন মাস আগে মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হয়ে এলে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ, ড. অনুপম সেনসহ ছয়জনের নামে সমন জারি করেছেন আদালত।
এর ধারাবাহিকতায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন গত ২৬ মে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।
২৮ বছর আগের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অনুপম সেন সেদিন আদালতে বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকে তিনিসহ প্রায় ৩০ জনের মত ছিলেন। আনুমানিক বেলা ১টার দিকে ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে এলে গুলি শুরু হয়। বিভিন্ন জনকে গুলি খেয়ে আমি কাতরাতে দেখিছি। অনেককে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করতেও দেখেছি। পরে শুনেছি, গুলিতে মোট ২৪ জন মারা গেছেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ঘটনায়।
পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৮ সালের ১৪ মে সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজ উদ্দিন দেওয়ান ৪৭ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর আদালত সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। অভিযোগপত্রে মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক গোবিন্দ চন্দ্র ম-ল ওরফে জেসি ম-ল, কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন, শাহ মো. আব্দুল্লাহ, বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামি কনস্টেবল বশির উদ্দিন, বাদী অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদা এবং শেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান ইতোমধ্যে মারা গেছেন। অন্যতম আসামি কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক জেসি ম-ল দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি