হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ২ আসামি
আজাদ হোসেন সুমন ও মো. শহিদুল ইসলাম (চট্টগ্রাম) : এসপি বাবুলের স্ত্রী ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ দুজনসহ বাবুলের সোর্স পেশাদার অপরাধী মুসাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চাঞ্চল্যকর হত্যা পরিকল্পনার পেছনে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার এক আত্মীয়ের সংশ্লিষ্টতা পেলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করা বা তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না জানানো, নিজের সোর্সকর্তৃক স্ত্রী খুন হওয়াসহ নানা কারণে বিষয়টি নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ওয়াসিম গুলি করে মিতুকে হত্যা করেছে জানালেও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ারের বক্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
গতকাল বিকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেছেন, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমের হত্যাকারী মোটরসাইকেল আরোহী তিনজনের একজন ওয়াসিম। সেই মাহমুদাকে গুলি করেছিল। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওয়াসিম এ তথ্য দিয়েছে। ইকবাল বাহার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। কার নির্দেশে, কেন তারা এ খুন করেছে, তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বলা যাচ্ছে না। আজ দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনেক তথ্য দিয়েছেন। কিন্ত তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অপরাধীরা পেশাদার। খুনে সাত থেকে আটজন অংশ নিয়েছেন। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। হত্যাকারীরা জঙ্গি কিনা জানতে চাইলে ইকবাল বাহার বলেন, এটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
গভীর রাতে পুলিশ পাহারায় বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার পর থেকে বাবুল আক্তারের নিরাপত্তায় পুলিশ ছিল। তদন্তের স্বার্থে মামলার বাদী হিসেবে তার সঙ্গে তদন্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কিনা, জানতে চাইলে কমিশনার কোনো জবাব দেননি। বাবুল আক্তারের পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে কমিশনার বলেন, তারা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছে জানি না। মামলাটির সঠিক তদন্তে সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। বাবুল আক্তারকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে নজরদারি কেন? ইকবাল বাহার বলেন, হত্যাকা-ের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক ছিল আনোয়ার। আর ওয়াসিমের গুলিতেই মিতুর মৃত্যু হয়। শনিবার নগরীর রাঙ্গুনিয়া থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, মিতু হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া মুসা, ওয়াসিম ও আনোয়ার ৩ জনই পেশাদার খুনি। এরা ছিল বাবুল আক্তারের বিশ্বস্থ সোর্স। সোর্সের হাতে নিজের স্ত্রী খুন হওয়ার কারণে এবং শুক্রবার রাতে শ্বশুর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে রাখার কারণে তাকে নিয়ে সন্দেহের প্রশ্ন উঠেছে।
তবে পুলিশের গোপন একটি সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃতদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। যেহেতু গ্রেফতারকৃত আসামি মুসা ইতোমধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, স্যার (এসপি বাবুল) বিষয়টি জানে; তাই তাকে পুলিশ সদর দফতরে এবং ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বাবুল আক্তারকে ছেড়ে দেওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এই ধূম্রজালের কারণে মিতু হত্যার তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য আলোর মুখ নাও দেখতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বদলি হওয়ার পর বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেন ৪ জুন। ৫ জুন চট্টগ্রামে স্ত্রী খুন হলে তারপর থেকে তিনি আর অফিস করেননি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি