
নিয়োগ জটিলতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হওয়াসহ সরকারি দফতরে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা
আনিসুর রহমান তপন : সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ ও অর্থবিভাগের স্ববিরোধী নির্দেশনার কারণে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অন্যান্য অফিসের ৪র্থ পদের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দিতে পারছে না সরকার।
তাই দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য এসব পদে নিয়োগ দিতে সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ অনুসরণ ব্যাতিরেকে বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠিয়েছে জনপ্রশান মন্ত্রণালয়। যেটি আজ অনুষ্ঠিতব্য কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হতে পারে। সারসংক্ষেপ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী ৪র্থ শ্রেণি (বর্তমান ৮ম পে-স্কেল অনুযায়ী ২০তম গ্রেড)’র কয়েকটি পদে সরাসরি রাজস্বখাতে নিয়োগের পরিবর্তে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে পূরণের নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী জানান, সারাদেশে প্রায় ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় চাপ। সেজন্য যেসব পদ জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ নয় সেসব পদে সরাসরি রাজস্বখাতে নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তাই এখন থেকে ৪র্থ শ্রেণির কিছু পদে যেসব আবার সরকারি স্বার্থে অতিগুরুত্বপূর্ণ নয়, সেসব পদে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। এতে সরকারের ওপর যে বাড়তি চাপ রয়েছে সেটি কমানো সম্ভব হবে। তবে সরকারের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এসব পদে সরকার নিয়োগ দিতে পারবে।
সারসংক্ষেপ সূত্রে জানা গেছে, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ এর ৩ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিদ্যমান নিয়োগবিধিগুলোতে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণের বিষয় উল্লেখ নাই। আবার ২০১৩ সালে অর্থ বিভাগের জারিকরা একটি পরিপত্রের ৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ, ডিসিপ্লিন ফোর্সেস এবং সুপ্রীম কোর্ট ছাড়া অন্যান্য সকল দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরী, মালি এবং ক্লিনার/সুইপারসহ ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়োগবিধির পরিবর্তে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করার বর্তমান নিয়ম চালু রাখতে হবে।
এ প্রেক্ষিতে এসব শূন্য পদের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিধি-অনুবিভাগের পরামর্শক্রমে বিদ্যমান নিয়োগবিধি সংশোধন ব্যাতিরেকে জরুরি বিবেচনায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদে নিয়োগের জন্য এর আগে দুবার অর্থ বিভাগের মতামত/সম্মতি চাওয়া হয়। জবাবে অর্থবিভাগ জানায়, আউটসোর্সিং বিষয়ে একটি বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন আছে। এরপর জরুরি বিবেচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তৃতীয় দফায় আউটসোর্সিং বিধিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আউটসোর্সিং নীতিমালা-২০০৮ ব্যাতিরেকে বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রদানের জন্য অর্থবিভাগের নিকট আবার মতামত চাওয়া হয়। তারপরও প্রস্তাবের পক্ষে অনুকূল মতামত পায়নি বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তৃতীয় দফায় অর্থবিভাগে পাঠানো প্রস্তাব সম্পর্কে সারসংক্ষেপে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়,এ বিষয়ে অর্থবিভাগ দায়সারা জবাবে আউটসোর্সিং নীতিমালা-২০০৮ এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ও ৫ যুগ্ম-সচিবকে নিয়ে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির পরামর্শ নিতে সুপারিশ করে। তাদের সুপারিশ মতে পূরণযোগ্য পদসমূহ ও এর তালিকা অনুযায়ী জনপ্রশান মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় পাঠানো সারসংক্ষেপে জনপ্রশান মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে জানায়, ফলে সারাদেশের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সরকারের অন্যান্য বিভাগসমূহে এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর, বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় সরকারি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি
