এসপি বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ জনমনে নানা প্রশ্ন
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকা-ে বাবুলকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মামলার বাদী হয়েও তাকে কেন এতো দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো? কি তথ্য পেয়েছে পুলিশ? বাবুল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পুলিশের আইজি বা কমিশনারের পক্ষ থেকে ফোন করলে অথবা গাড়ি পাঠালে বাবুল নিজেই চলে যেতে পারতেন গন্তব্যে। বাবুলকে কেন পুলিশ গিয়ে নিয়ে এল? বাবুলের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল কেন? পরিবারকে জানানো হয়নি কেন? গতকাল রোববার সকাল থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ ফোন করে বা দেখা করে এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চান।
গত শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ বাবুল আক্তারকে পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি ও খিলগাঁও থানার ওসি ঢাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে বাবুল আক্তারকে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে গত শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে খিলগাঁওয়ের ভুঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় এই পুলিশ কর্মকর্তাকে। বাবুলকে নিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে স্বজনদের মধ্যে তৈরি হয় সন্দেহ আর উদ্বেগ। সংবাদমাধ্যমে এ খবর আসায় গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। মিতু হত্যা মামলায় স্বয়ং বাদীকেই জিজ্ঞাসাবাদে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, স্ত্রী মিতু হত্যামামলার বাদী এসপি বাবুল আক্তার। তাই আইন মেনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিএমপিতে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, মিডিয়াতে যেসব তথ্য আসে তার সবকিছু যে সত্য, তা নয়। এর কোনোটি সত্য আবার কোনোটি মিথ্যাও থাকে। তবে বাবুল আক্তারের যে ঘটনা ঘটেছে, তা অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। কমিশনার আরও বলেন, বাবুলের এক সোর্সের দেওয়া তথ্যেরভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি যখন সময় দিয়েছেন তখনই তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এ কারণে মামলার তদন্তে যেসব তথ্য এসেছে, তা তাকে জানানো হয়েছে। ঘটনা চট্টগ্রামের, অন্যদিকে তিনি থাকেন ঢাকার বাসায়। এ কারণে পুলিশ তার জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা কথা উঠলে তা তো পরিষ্কার করতে হবে। বাবুল আক্তারকে নিয়ে ক্রিমিনালদের সামনা-সামনি করা হয়েছে। তারা যা বলেছে, তা যাচাই করা হয়েছে।’ কিন্তু এই খুনের ঘটনা নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য করছে। কেউ কেউ তাদের পারিবারিক বিষয়েও মন্তব্য করছেন। এসব কি সত্যি? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হতে পারে। তবে এখনও প্রকাশ করার সময় আসেনি, আমরা সবকিছুই প্রকাশ করব আরও একটু সময় নিয়ে।’
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম। এ মামলায় আটক তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করতে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কী তথ্য পেয়েছে তা পুলিশ স্পষ্ট করছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন গণমাধ্যমকে বলেন, মাহমুদা খানম খুনের ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের একটি দল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি