আবাসন সমস্যা সমাধানে প্লট নয়, ফ্ল্যাট
ইকতেদার আহমেদ
মানুষের জীবনধারণের জন্য যে ৫টি মৌলিক উপকরণ অত্যাবশ্যক এর একটি হলো আবাসন। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এখনও যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব থাকলেও শহরাঞ্চলে কদাচিৎ যৌথ পরিবারের সন্ধান মিলে। গ্রামাঞ্চলে একটি বাড়িতে একাধিক পরিবারের বসবাস। কিন্তু শহরাঞ্চলে প্রতিটি একান্নবর্তী পরিবারের বসবাসের জন্য পৃথক বাড়ি বা ফ্ল্যাটকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে জনসংখ্যানুপাতে ভূমির প্রাপ্যতা খুবই কম। আমাদের দেশে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে নতুন বসতগৃহ নির্মাণের আবশ্যকতা দেখা দেওয়ায় ভূমির ওপর চাপ বেড়ে চলেছে। ভূমির ওপর এ বাড়তি চাপের কারণে প্রতিনিয়তই কৃষিজমি বসতগৃহ নির্মাণে ব্যবহার হচ্ছে, পুকুর ভরাট করে বসতগৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, জলাভূমি, খালবিল ও নদী ভরাট করে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে, আবার পাহাড় কেটেও আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আমাদের শহরাঞ্চল বিশেষতঃ ঢাকা শহরের দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানে নগরবাসীর আবাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রয় হয়ে আসছে। আমাদের এ দেশ বৃটিশ শাসনাধীন থাকাকালীন ঢাকা শহরের ওয়ারিতে প্রথম নগরবাসীর আবাসনের জন্য সরকারিভাবে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়। অতঃপর পাকিস্তান শাসনামলে ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী প্রভৃতি নামে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলে সরকারিভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয় পরবর্তী বারিধারা, উত্তরা, নিকুঞ্জ, ঝিলমিল, পূর্বাচল নামকরণে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলে সরকারিভাবে নগরবাসীর জন্য প্লটের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয় এবং এ নীতিমালার ভিত্তিতে সরকারের পদস্থ পদে নিয়োজিত ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। সচরাচর দেখা যায়, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত প্লটসমূহ যে মূল্যে বিক্রি করা হয় তা বাজারমূল্য হতে অনেক কম হয়ে থাকে এবং সময়ের ব্যবধানে এসব প্লটের মূল্য কল্পনাতীতভাবে বেড়ে যায়।
লেখক : সাবেক জজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন