বিশেষ সাক্ষাৎকারে সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলি যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ, গুপ্তহত্যাকারীদের এই উৎপাত বন্ধ করা জরুরি
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এতদিন উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন অবকাঠামো দেখে দেখে এসেছি, সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা, সাহসী উদ্যোগের কারণে আমাদের ইচ্ছের বাস্তবায়ন হয়নি। সাহসের সেই সীমাবদ্ধতা এখন আমরা জয় করেছি। অতিক্রম করেছি সীমাবদ্ধতার সকল বাঁধা। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি।
তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা ২০১৯-২০২০ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে নগরের যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে। নাগরিক ভোগান্তি কমবে। এছাড়া আরও কয়েকটি মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রেন সার্ভিসও শক্তিশালী করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ‘ সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ নামের একটি নতুন ট্রেন উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। রেল যোগাযোগ একটা শক্ত অবস্থায় দাঁড় করানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। একদিকে ফ্লাইওভার, অন্যদিকে মেট্রোরেলÑ রাজধানীর নাগরিকদের স্বস্তি এনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকা শহরের অবকাঠামোর উন্নয়নই নয়, সারাদেশের অবকাঠামোর খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। চারলেন, বিভিন্ন শহরে ফ্লাইওভার স্থাপিত হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মাসেতু তো রয়েছেই। কে ভেবেছে, বাংলাদেশ তার অর্থায়ানে এত দীর্ঘ একটি সেতু হবে? শেখ হাসিনার আগে কে এমন সাহস করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলা বিশ্বব্যাংককে কেয়ার না করে এমন একটি সেতু করার? কেউ নেই। এটা পারে আওয়ামী লীগই, এমনটি কেবল সম্ভব শেখ হাসিনার পক্ষেই। শেখ হাসিনা জনকল্যাণ, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে একটি ভিত্তির ওপর স্থাপন করার চেষ্টা করছেন যেমন, তেমনি উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও বিশ্ব কূটনীতিকেও সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এগিয়ে নেওয়ার সব রকম চেষ্টা তার মধ্যে রয়েছে। তার প্রতিফলন কর্মকা-েই প্রতিফলিত হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে এম. শাহ্্ নওয়াজ আলি বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, স্বকীয়তার জন্য সংগ্রাম করেছে, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ এখন করছে। এখানে একটা প্রশ্ন প্রায় তোলার চেষ্টা হয়, বলা হয়ে থাকেÑ উন্নয়ন আগে নাকি গণতন্ত্র? উন্নয়নের জন্য কী আংশিক গণতন্ত্র একটি রাষ্ট্রের জন্য কতটা সঠিক? এরকম নানা প্রশ্ন আসছে। আসাটাও স্বাভাবিক। আবার এমন প্রশ্নের ভিতর অস্বাভাবিকতাও রয়েছে। কারণ এখানে গণতন্ত্র সীমিত, একরকম নেইÑ এমনটি আপনি কেন বলবেন?
৫ জানুয়ারির নিয়মতান্ত্রিক একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই তো এই সরকার ক্ষমতাসীন। হ্যাঁ, নির্বাচনে বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এই দায় কার? বিএনপি কেন নির্বাচনে গেল না? কেন প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার ডাকে সাড়া না দিয়ে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হলো? নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেই দেখত, সুষ্ঠু হয় কিনা। না হলে তো তাদের সুযোগ ছিলই, মানুষও দেখত সরকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করত। জনগণই তখন সরকারের বিচার করত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এম. শাহ্্ নওয়াজ আলি বলেন, আমি মনে করি না বিএনপির সংসদে অনুপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য বড় কোনো অশনি সংকেত। এটা ঠিক, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল সংসদের থাকাটা জরুরি ছিল। তারা সরকারের ভুলক্রটিগুলো নিয়ে কথা বলতে পারত, জনগণকে অবহিত করতে পারত। সরকারি ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, গঠনমূলক সমালোচনা যদি সংসদ থেকে জোরালভাবে আসত, তাহলে এর সুবিধাভোগী বিএনপিসহ পুরো দেশ পেত, জনগণ পেত।
তিনি আরও বলেন, এখানে আপনার সঙ্গে আমিও একমত যে, দেশে জঙ্গিবাদ, গুপ্তহত্যা, মুক্তচিন্তক, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তা চিন্তিত হওয়ার মতোই। উত্তরার একটি খালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার আমাদের চিন্তিত করে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না। সরকার চেষ্টা করছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার। ইতোমধ্যেই সাঁড়াশি অভিযানে অনেক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী পাকড়াও করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও অবস্থানে যাওয়া উচিত সরকারের। লাখো শহীদের রক্তে কেনা এই ভূখ-ে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, গুপ্তহত্যাকারীদের জন্য নয়, তাদের এই উৎপাত যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক হামলা, গুপ্তহত্যাকারীদের এই উৎপাত বন্ধ করা জরুরি বলেও মনে করেন এই সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন