বাতিটা নিভে গেল
আমিন ইকবাল
আলোকিতজন, খ্যাতিমান আলেম মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (৮৫) আর নেই। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এদেশের আলেমদের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। সর্বাধিক প্রচারিত ইসলামি সাময়িকী মাসিক ‘মদীনা’র সম্পাদক ছিলেন। তাফসিরে মাআরিফুল কুরআনের বঙ্গানুবাদ করে সবার মাঝে শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছেন। রাজনীতি ও লেখালেখির প্লাটফর্মে সমান তালে হেঁটেছেন জীবন-বিপ্লবের বাঁকে বাঁকে।
১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেলাধীন পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ছয়চির গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আনসার নগর। বাবা হাকীম মৌলভী আনসারুদ্দীন খান ও মা রাবিয়া খাতুন। পাঁচবাগ মাদরাসা থেকে ১৯৫১ সালে আলিম ও ১৯৫৩ সালে স্কলারশিপসহ ফাজিল পাস করেন। ১৯৫৩ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে হাদিস বিষয়ে কামিল ও ১৯৫৬ সালে ফিকাহ বিষয়ে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তার সম্পাদিত, অনূদিত ও সংকলিত বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। ষাটের দশক থেকে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি মাওলানা আতহার আলী রহ. প্রতিষ্ঠিত নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে সমাসীন ছিলেন। পরবর্তীতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে ইসলামী শাসনতন্ত্রের জোরদার আন্দোলন চালিয়ে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫/২৬ ডিসেম্বর ঢাকার পটুয়াটুলী জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় জমিয়তের কাউন্সিলে তিনি জমিয়তের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনেই তানজিমুল মাদারিস গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৮ মার্চ জমিয়তের সহ-সভাপতি এবং ২০০৩ সালের ১লা জুন নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন।
তার আরও অনেক পরিচয় রয়েছে। তিনি সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জাহান’-এর প্রতিষ্ঠাতা। রাবেতা আলমে ইসলামীর কাউন্সিলর। মু’তামারুল আলম ইসলামীর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট। জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান। তার জীবনের একান্ত ইচ্ছে ছিল, বাংলা ভাষায় এদেশের আলেমরা বড় মযবুত ও শক্ত একটা ভাষার ভীত যেন তৈরি করে যায়। তার স্বপ্নপূরণের গুরুদায়িত্ব তিনি আলেমদের দিয়ে গেছেন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন