ছিনতাইয়ে নারী টার্গেট, ঠেকাতে উদ্যোগ নেই
ড. বদরুল হাসান কচি
শারমিন রমা রিকশা করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাচ্ছেন, সঙ্গে আছেন তার মেয়ে শিশুটিও। রিকশার পাশ দিয়ে যাওয়া দুই মোটরসাইকেল আরোহী হঠাৎ তার হাতব্যাগ ধরে টান দেয়; এ সময় তার হাতব্যাগের বেল্ট হাতের সঙ্গে পেচানো থাকায় তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান। এখানেই শেষ নয়, এভাবেই অনেকটুকু পথ তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় মোটরসাইকেলটি। এক পর্যায়ে ব্যাগের বেল্ট ছিঁড়ে গিয়ে রাস্তার আরেক পাশে গড়িয়ে পড়েন তিনি। ঠিক এই পরিস্থিতিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে তা না বললেও আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন। ঘটনাটি কয়েকদিন আগের, রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায়। শারমিন রমা গণমাধ্যমকর্মী হওয়ায় সংবাদটি অনেক মিডিয়ায় এসেছে। এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা রাজধানীতে প্রতিনিয়ত ঘটছে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই অসহায় নারীগুলোর কথা কেউ জানে না। ঈদের সময় এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। আমার পরিচিত এক নারীর সঙ্গেও শারমিন রমার মতোই একটি ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি বছর দেড়েক আগের, ধানমন্ডির কাছাকাছি এলাকায়। তিনি সাধারণ কেউ ছিলেন বলে সেটি গোপনেই থেকে গেল। তবে সাধারণের ক্ষেত্রেও অনেক সময় সংবাদ হয়, যদি আয়েশা নামের গৃহবধূর সঙ্গে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তেমন কিছু যদি ঘটে। ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবরের এই ঘটনাটিও ধানমন্ডি এলাকায়, সোবহানবাগ মসজিদের সামনে ঘটেছে। ওইদিন রিকশা করে যাবার সময় চার পাঁচজন ছিনতাইকারী একটি মাইক্রোবাসে এসে ওই নারীর হাতব্যাগ ধরে টান দেয়। ব্যাগটি তার হাতে প্যাঁচানো থাকায় ছিনতাইকারীরা তাকে অনেকদূর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়, একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ব্যাগটি নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু মারাত্মকভাবে আহত ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। সাধারণ এই নারীর কথা সেদিন মিডিয়ায় এসেছে কেবল তার করুণ পরিণতির কারণে। কিন্তু এভাবে আর কতো নারীকে প্রতিনিয়ত আহত, নিহত হতে হবে? আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বিষয়ে কোনো দৃষ্টি আছে বলে খুব একটা মনে হয় না। পুলিশের দৃষ্টিতে ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন মনে হলেও ছিনতাইকারীরা মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়, তারা সংঘবদ্ধ। আর সংঘবদ্ধগোষ্ঠীর কেউ না কেউ বিভিন্ন কারণে পুলিশের কাছে ধরাও খাচ্ছে, সেই সূত্রে তাদের তথ্য পুলিশের কাছে থাকার কথা। কিন্তু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক্ষেত্রে পুলিশের স্বদিচ্ছা নাকি উদ্যোগের অভাব বলব? কেবল এটা ভাবলেই ভয় হয়, আমার প্রিয়জনের বেলাও হয়তো এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে? আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই, তারা উদ্যোগী হলে এমন ছিনতাই ঠেকানো খুব কঠিন কিছু নয়।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন