ঐকমত্য না হওয়ায় গে-ারিয়ায় মসজিদ নির্মাণে স্থিতাবস্থা জারি
রিকু আমির : বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গে-ারিয়ার কালী চরণ সাহা এলাকার যে স্থানে কাপড়িয়া জামে মসজিদ নামে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছিল, সে স্থানে স্থিতাবস্থা জারি করে সতর্কীকরণ নোটিস দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকালে গে-ারিয়া থানার ওসি কাজী মিজানুর রহমানের সাক্ষরযুক্ত নোটিসটি মসজিদের দেয়ালে টাঙানো পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার গে-ারিয়া থানায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গে-ারিয়া থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কুমার রায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছিলেন। এর উদ্ধৃতি দিয়ে নোটিসে লিখা রয়েছে- জিডি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো বিরোধীয় কাজে জড়াবেন না। বাদি-বিবাদি সবাই ওই জায়গায় শান্তি বজায় রাখবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করে ওই ভূমিতে আইন-শৃঙ্খলা, শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি, বিশৃঙ্খলা ঘটায় বা ঘটানোর চেষ্টাসহ ভূমিতে কোনো ধরনের নির্মাণ, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থল স্থিতি অবস্থা রাখার নোটিস প্রদান করা হলো।
সোমবার সকালে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেন। যাতে বলা হয়েছে, কালী চরণ সাহা এলাকার ৩১নং হোল্ডিংয়ের ৩৮৪ অযুতাংশ ভূমি কতিপয় ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী জবর দখল ও গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা যেন এ ভূমি দখল করতে না পারে, সেজন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আবেদনের মাধ্যমে।
এরপর সমস্যা সমাধানে গে-ারিয়া থানায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহীদুল ইসলাম, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের ওয়ারী জোনের এডিসি মেহেদী হাসান, গে-ারিয়া থানার ওসি কাজী মিজানুর রহমান, স্থানীয় জন-প্রতিনিধির পক্ষ থেকে ৪৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল্লাহ মিনু, স্থানীয় এলাকার মুরুব্বিদের পক্ষ থেকে আবদুল খালেক লাল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে ৪৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলেমান কাদের মিন্টু, মসজিদ নির্মাণ উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে মোস্তাক আহমেদ, আমিনুল্লাহ খোকন, ৪৬ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর হেলেন, জাতীয় পার্টি গে-ারিয়া শাখার আহ্বায়ক শারফুদ্দিন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মসজিদ নির্মাণ উদ্যোক্তাদের পক্ষের লোকজনকে জানানো হয়েছে, যেহেতু জায়গাটি নিয়ে বিরোধ চলছে, সেহেতু এখানে মসজিদ নির্মাণ কাজ চালানো, নামাজ আদায়সহ অন্য সব ধরনের কাজ করা অযৌক্তিক। কিন্তু উদ্যোক্তারা পাল্টা বলেন, এ এলাকায় চারটি মন্দির রয়েছে, একটি মসজিদও নেই। অথচ এলাকাটিতে মুসলমানের সংখ্যাই বেশি। মসজিদ না থাকায় মুসল্লিরা বিশেষ করে বয়স্কদের অনেক দূরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়। আর এ জায়গা সরকার থেকে লিজ নেওয়া। মিল ব্যারাক সমাজ কল্যাণ সংগঠনসহ অন্য যেসব ব্যক্তি লিজ সূত্রে জায়গাটি ভোগ-দখল করছিল, প্রত্যেকেই সজ্ঞানে মসজিদের জন্য জায়গা দান করেছেন। লিজ নেওয়া স্থানে স্থায়ীভিত্তিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না বলেও জানানো হয় উদ্যোক্তাদের। কিন্তু উদ্যোক্তারা সাফ জানিয়ে দেন, নামাজ তারা আদায় করবেনই এবং মসজিদ নির্মাণ করবেনই। এসময় উদ্যোক্তাদের বিপক্ষের কিছু লোকজন বৈঠক থেকে চলে যান।
ওসি কাজী মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ চাচ্ছে ঘটনাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান। কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নোটিস দেওয়া হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত- বর্তমানে জায়গাটির অবস্থা যেমন রয়েছে তেমন থাকবে। কেউ এখানে কোনো কিছু করতে পারবে না।
এদিকে, সোমবার বিকালে মসজিদ প্রাঙ্গণসহ কালী চরণ সাহা এলাকায় গত রোববারের মতো উত্তেজনা দেখা যায়নি। তবে ওইসব এলাকায় বিষয়টি নিয়ে নরম-গরম, উত্তেজক আলোচনায় মত্ত ছিলেন স্থানীয় মুসলমান ব্যক্তিরা। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি