এই গণভোট উপদেশমূলক বাধ্যতামূলক নয় : ব্রিটিশ এমপি ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়ছে বর্ণবাদ
অনির্বাণ বড়ুয়া : পুরো ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ছে জেনফোবিয়া। যার ফলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বর্ণবাদ। গণভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষের ভোটাররা অভিবাসীদের দেখলেই চিৎকার করে বলছে ‘এখনই আমাদের দেশ ছেড়ে যাও’। ‘এখনই সময় যুক্তরাজ্যকে আবার সাদা বানানোর’। টুইটারে শত শত মানুষ টুইট করেছে তারা এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ডেলিয়েল ওয়াটসন নামে একজন একটি ছবি পোস্ট করেছেন! ছবিটিতে দেখা যায় কয়েকজন লোক একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যেখানে লেখা, ‘অভিবাসন বন্ধ করো, দেশে পাঠানো শুরু করো।’ ছবিটি পোস্ট করে ডেলিয়েল লিখেন, ‘অবিশ্বাস্য’।
ডেভিড হেড নামে একজন প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী লিখেছেন, ‘কয়েকজন পোলিশ (পোল্যান্ডের নাগরিক) কর্মী বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছে ব্রেক্সিটের বিষয়ে। প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে তারা নিজেদের মুখ দেখাতে নিষেধ করেছে।’
স্টেফানি নামে একজন লিখেছেন, ‘গ্রেট পোর্টল্যান্ড স্ট্রিটে লোকজন চিৎকার করছে, ব্রিটেনকে আবার সাদা বানাও। আমি চিন্তিত!’ প্রসঙ্গত, স্টেফানি একজন কৃষ্ণবর্ণের ব্রিটিশ নাগরিক।
হেভেন ক্রলি নামে এক নারী লিখেছেন, ‘সন্ধ্যায় আমার মেয়ে বার্মিংহ্যামে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখেছে কয়েকটি ছেলে একটি মুসলিম মেয়েকে ঘিরে ধরে বলছে, বের হয়ে যাও। আমরা বের হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছি।’
এক পাকিস্তানি লিখেছেন, ‘ব্রেক্সিটের ২০ ঘণ্টা যেতে না যেতেই আমাকে একজন বাস্তুহীনের কাছ থেকে গালি শুনতে হয়েছে!’
ডা. কারিন বেটিসন নামে একজন লিখেছে, ‘৭৮ শতাংশ মুসলমানের একটি স্কুলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। দেখলাম একজন লোক স্কুল থেকে বাসায় যাওয়া পরিবারগুলোর দিকে ভিক্টোরি সাইন দেখাচ্ছে। আমরা এমন বর্ণবাদকে বৈধতা দিয়েছি।’
এদিকে যুক্তরাজ্যকে এমন বাজে পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে আরেকটি গণভোটের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্কের দাবিতে একটি পিটিশনে গণহারে স্বাক্ষর চলছে। পিটিশনটি তৈরির দুই দিনেরও কম সময়ে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনো পিটিশনে এক লাখ লোকের স্বাক্ষর পড়ে তাহলে সেটি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হতে বাধ্য। এদিক থেকে চিন্তা করলে এই পিটিশন নিয়ে একটি তর্ক হতে যাচ্ছেই বলা যায়।
এ বিষয় কথা হয়েছে ইইউ আইন বিশেষজ্ঞ ড. রায়হান রশীদের সঙ্গে। আরেকটি গণভোট সম্ভব কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন নয়? কোনো আইনগত বাধা তো দেখি না। এই বিষয়টার সাথে জাতীয় স্বার্থ, যুক্তরাজ্যের অখ- অস্তিত্বের স্বার্থ জড়িয়ে আছে।’
পিটিশনটি ডাক দিয়েছেন উইলিয়াম অলিভার হিলি নামে এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষের প্রচারণাকারী। তবে এখন তিনি অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, এই পিটিশনটিকে আমলে নিয়ে আরেকটি গণভোট দিতে হবে, কারণ এই গণভোটে বিজয়ী পক্ষ ৬০ শতাংশ জনপ্রিয়তা পায়নি। বিজয়ী ও পরাজিতের পার্থক্য মাত্র চার শতাংশ। আর ভোটারের উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ হয়নি।
ইতিমধ্যে লেবার পার্টির প্রবীণ সাংসদ ডেভিড লেমি বাকী সাংসদদের অনুরোধ করেছে যাতে সাংসদরা এই গণভোটের ফলাফলকে আমলে না নেয়।
ইতিপূর্বে ইইউ আইন বিশেষজ্ঞ ড. রায়হান আমাদের জানিয়েছেন যে, গণভোটের ফলাফল মানা সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাই বলা যায়, যুক্তরাজ্যের ভাগ্যে এখনও সিলমোহর পড়েনি। যেভাবে বর্ণবাদ জেগে উঠছে আর যুক্তরাজ্য ভেঙে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে তাতে করে গণভোটের ফলাফল বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়ে আরেকবার চিন্তা করে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ডেভিড লেমি আরও বলেন, ‘এই পাগলামি থামাও। এই গণভোট ছিল উপদেশক, বাধ্যতামূলক নয়। তাই এখন সংসদের ঠিক করতে হবে তারা এই গণভোটের ফলাফলের দিকেই যাবে নাকি সংসদে ভোটাভুটি করবে।’
ধারণা করা হচ্ছে, এই পিটিশনটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে সংসদে বিতর্ক হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম