মানসিকভাবে ভেঙে পড়া বাবুল ২ সন্তান নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন
সুজন কৈরী : স্ত্রী হত্যার ঘটনায় এসপি বাবুল আক্তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আছেন শ্বশুর বাড়িতেই। সেখানে তিনি অবুঝ দুই সন্তান মাহির ও টাপুরকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, জামাতা নজরদারিতে রয়েছেন বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, মেয়েকে হত্যার পর থেকেই আমাদের বাসায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। এতে আমাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। পুলিশ স্বাভাবিক নিয়মেই তার দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ কখনও মূল ফটকে থাকে আবার কখনও মূল সড়কে পাহারায় থাকে।
গতকাল সোমবার মেরাদিয়ার ভুইয়াপাড়ায় ২২০/এ নম্বরস্থ নিজ বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মিতু হত্যার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। তবে এ হত্যাকা-ের তদন্তে পুলিশের গাফিলতি আছে বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশ তাদের নিজস্ব গতিতে এগুচ্ছে। আমি মনে করি, পুলিশ সঠিকভাবেই তদন্ত করছে।
বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশ এটা করতেই পারে। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ মামলা সংশ্লিষ্ট যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাবুলকে এভাবে নিয়ে যাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আরও বলেন, স্ত্রীর মৃত্যু এবং পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বাবুল আক্তার। মোশাররফ হোসেন বলেন, মেয়েকে হত্যার পর থেকে বাবুল এ বাড়িতেই থাকছেন। তবে তিনি সবসময় রুমের দরজা বন্ধ করে রাখেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। এছাড়া সাংবাদিকসহ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গেও দেখা করছেন না কিংবা কারও ফোনও রিসিভ করছেন না। বাবুলের সঙ্গে কোনো কাজ থাকলে পুলিশ কর্মকর্তারা বাসায় এসে দেখা করেন।
বাবুল আক্তারের সন্তানদের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মিতুর মৃত্যুর পর তার ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির (৭) ও মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন টাপুর (৪) মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের ল্যাব এইড হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরদিন শুক্রবার আবারও যাওয়ার কথা থাকলেও আর নেওয়া হয়নি। বাবুল এখন মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। একে তো তার স্ত্রী মারা গেছে, অন্যদিকে ছোট দুটি বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তা।
মিতু হত্যাকা-ে বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং এসব কথা তারা বিশ^াস করেন না বলে জানান মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ওদের দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ কিংবা অবিশ^াস ছিল না। ফলে বাবুলের পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়।
সবশেষে তিনি বলেন, আমি কোনো কিছু বুঝতে বা জানতে চাই না। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের প্রত্যাশা রাখি। আপনারা সাংবাদিকরা হেল্পহ্যান্ড। আপনাদের মাধ্যমে আমি আমার মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার চাই। এটুকুই দাবি আমার।
গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যামামলা করেন। তদন্ত চলাকালীন হঠাৎ গত শুক্রবার গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যান মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার ও খিলগাঁও থানার ওসি। সেখানে তাকে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শনিবার বিকালে বাসায় ফেরেন বাবুল। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি