জিয়ার কবরসহ নকশা বহির্ভূত স্থাপনা সরানোর সিদ্ধান্ত দুই মাস পর পাওয়া যাবে লুই কানের নকশা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : লুই কানের করা জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নকশা দুই মাস পরই পাওয়া যাবে। ওই নকশা হাতে পেলেই জিয়ার কবরসহ সংসদ ভবন এলাকায় মূল নকশা বহির্ভূত স্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে সংসদ সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, জিয়ার কবরসহ বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে লুই কানের মূল নকশা উপেক্ষা করে। বিভিন্ন সময়ে দেশের ইতিহাসবিদ, স্থপতি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এর প্রতিবাদ জানালেও তার কোনো প্রতিকার হয়নি।
সূত্রে জানা যায়, স্থপতি ও ইতিহাসবিদরা এর আগেরবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে নেন। শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লুই আই কান-এর মূল নকশা সংগ্রহের নির্দেশ দেন সংসদ সচিবালয়কে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী লুই আই কান-এর মূল নকশা আনার নির্দেশনা দেন।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর গত ৬ জুন লুই আই কানের নকশা সংগ্রহের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র যায় ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দল গতকাল ২৬ জুন ফিরেছে এবং তারা বলেছেন, দুই মাস পর মূল নকশা পাওয়া যাবে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব (আপিএ) আ. ই. ম গোলাম কিবরিয়া, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯,অধিশাখা) মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব, স্থাপত্য অধিদফতরের সহকারি স্থপতি সাইকা বিনতে আলম।
জানা গেছে, প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটি গিয়ে নকশাগুলো শনাক্ত করে আসে। নকশা আনা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভ থেকে নকশাগুলোর প্রিন্টিং শুরু হয়ে গেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ. ই. ম গোলাম কিবরিয়া বলেন, তারা নকশাগুলো দেখে এসেছেন। দলটি নকশাগুলো বাছাই করে এসেছে। এখন সেগুলো প্রিন্টিং শুরু হয়ে গেছে। দ্রুতই সব নকশা আনা সম্ভব হবে।
স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে ৮ হাজার নকশা রয়েছে। এরমধ্যে ৮৫৩টি নকশার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ৮৫৩টি নকশাই সংগ্রহ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আরও ৫৬টি ডকুমেন্ট রয়েছে, সেগুলোও আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটি নকশাগুলো চিহ্নিত করেছে। এখন আর আনতে সমস্যা নেই।
সংসদ সচিবালয় সূত্র অনুযায়ী, এসব নকশা আনতে খরচ হচ্ছে ১৯ ডলার। ১৯৭৪ সালে শেরে বাংলা নগরে ৪২ একর জায়গায় জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইসডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জমি কমে যাওয়া এবং বর্তমানের চাহিদা বিবেচনায় লুই আই কানের নকশা স্থাপত্য অধিদফতর কিছুটা সংশোধন করেছে।
১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নকশাটি করেন, তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের জন্য এ পরিকল্পনা করেন। তখন সেখানে মসজিদ ছিল, মাঝে বাগান ছিল, চন্দ্রিমা উদ্যানের ওখানে একটি বড় সড়ক ছিল, এর সামনে লেক ছিল, এরপর সংসদ ভবন ছিল। তাই অনুলিপি ধরে নয়, ১৯৭৪ সালের মূল নকশা ধরে সচিবালয়সহ সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝখানে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। আর জিয়া ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউ এর পশ্চিম প্রান্ত লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরও অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়।
তিনি জানান, লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনেও বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানেও লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়।
জানা গেছে, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস লুই আই কানের নকশা উপেক্ষা করে আসাদগেটের উল্টো দিকে অবস্থিত সংসদ ভবনের জায়গায় একটি পেট্রোলপাম্প স্থাপনের জন্য তিনি তার ছোট ভাই মির্জা খোকনকে জায়গা বরাদ্দ দেন।
এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ওই সময় সংসদ ভবনের মূল ভবনের পাশেই খোলা সবুজ চত্বরে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ করা হয়। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম