
বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
দীপক চৌধুরী : ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা (৫১) হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে সোহেল আহম্মেদ ওরফে ভাঙারি সোহেলের নাম বাদ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাই তাকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেনÑ কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন। এদের মধ্যে সোহেল ছাড়া অন্য সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সাত আসামির মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত ইতোমধ্যেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মতিন ও এই চারজন কারাগারে আছেন। কাইয়ুম ও ভাঙারি সোহেল পলাতক।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান এলাকায় সিজার তাবেলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে কাইয়ুমের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছিলেন মতিন। মতিন অন্যদের ভাড়া করেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। কাইয়ুম পরিকল্পনা করলেও হত্যাকা- বাস্তবায়ন করেন তার ছোট ভাই আবদুল মতিন। মতিন খুনি ভাড়া করে তাবেলাকে হত্যা করিয়েছেন।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, আদালতে রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুলের জবানবন্দিতে হত্যাকা-ের নির্দেশদাতা হিসেবে মতিনের নাম এসেছে। মতিন রিমান্ডে ডিবির কাছে তাবেলা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
তদন্ত সংশিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশে-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এই পরিকল্পনা করা হয় বলে ডিবির কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
মতিনের নির্দেশে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ, রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে সিজার তাবেলাকে (৫১) হত্যা করেন। এতে তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল। মোটরসাইকেলটি চালিয়েছিলেন মিনহাজুল। ওই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে, তাবেলা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেছিলেন, দুই তরুণ তাবেলাকে গুলি করে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষমাণ ব্যক্তির পেছনে উঠে পালিয়ে যান। তাবেলা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।
