‘টক শো’তে যোগ্য উপস্থাপক কোথায়?
‘টক শো’Ñ মানে কথা বলার শো। সারাবিশ্বেই এই ‘টক শো’ জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও। দেশে অনেক টেলিভিশন চ্যানেল হয়েছে। বিনোদন ও সংবাদভিত্তিক উভয় টেলিভিশনই রয়েছে। সংবাদভিত্তিক যে কটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে, তারা ২৪ ঘন্টাই সংবাদ প্রচার করে। সংবাদ ও বিনোদন নির্ভর চ্যানেলগুলোও টক শো’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বিশেষ করে সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলোতে একাধিক ‘টক শো’ থাকে। এসব ‘টক শো’ অনুষ্ঠান অনেক জনপ্রিয়। মানুষ সেসব অনুষ্ঠান দেখেও।
জনপ্রিয় এই ‘টক শো’Ñ অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা যেমন রয়েছে, আছে সমালোচনাও। ‘টক শো’ এখন কি, এটা কারও কাছেই পরিষ্কার নয়। যেকোনো দুজন লোকের কথা বলাকে মনে করা হয়, ‘টক শো’। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে, যে পরিমাণ টেলিভিশন অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছেÑ এই পরিমাণ যোগ্য, শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত উপস্থাপক তৈরি হয়নি। উপস্থাপক তৈরি করার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয়তো এখন উপস্থাপনার বিষয়ে পাঠ দেওয়া হয়। শেখানো হয়। ভবিষ্যতে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে জোরাল পাঠ্যক্রম থাকবে, পড়ানো হবে। এটা ভিন্ন কথা। যারা এখন শিখছে, তারা আসবে ভবিষ্যতে।
আমাদের ভাবনার বিষয় বর্তমান। এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ‘সেই’ পর্যায়ের দক্ষ লোকজন কী আছে? নেই বললেই চলে। সমসাময়িক কিংবা ইতিহাস ভালোভাবে না জেনেই অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় চলে আসছি। উপস্থাপনাও করছি। হয়তো লোকজন প্রশংসাও করছে।
ম্যানেজমেন্ট আমাদের অনেক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিচ্ছেÑ কিন্তু দক্ষ লোকবল কি পর্যাপ্ত পরিমাণ পাচ্ছি? জায়গাটি নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কারণ এই জায়গাটিতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। শুধু টেলিভিশন ‘টক শো’-ই নয়, কারিগরি দিক থেকে শুরু করে উপস্থাপনাÑ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, দক্ষ জনবল তৈরি হবে কিভাবে সেই জায়গাটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সুচিন্তা জরুরি। নিজেদের যদি আমরা যোগ্য করে তুলতে পারি, ‘টক শো’ নিয়ে এখন যতটুকু সমালোচনা রয়েছে, সমালোচনা অনেকাংশে কমে আসবে।
‘টক শো’ অতিথি নির্বাচন নিয়ে ভাবনার আছে। চিন্তা করার দরকার আছে। যাদের আমরা ‘টক শো’র অতিথি হিসেবে নির্বাচন করি আলোচনা করার জন্য, তাদের নিরপেক্ষতার বিষয়টি আমি একটু ভিন্নভাবে দেখতে চাই। সাধারণত আমাদের একাধিক অতিথি থাকেন। কারণ, ভিন্নমত জরুরি। মত ভিন্নমতের মাধ্যমে ‘টক শো’কে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। নিরপেক্ষ, নির্মোহ করে তোলা আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু দুজন মানুষ যদি একপক্ষ নিয়ে কথা বলেন, সঙ্গে উপস্থাপকও তাদের কথারই প্রতিধ্বনিই করতে থাকলেন, তাহলে সেই অনুষ্ঠান কখনোই আকর্ষণীয় হবে না। তখন এটি একটি মনোটোনাস অনুষ্ঠানে পরিণত হবে। সেজন্যই আমরা ভিন্নমতের মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ভিন্নমতের মানুষকে সবসময়ই মানুষ পছন্দ করেন, তবে সেই ভিন্নমত যদি ঝগড়ার পর্যায়ে না যায়, ভিন্নমত যদি কুৎসা বা নিন্দার পর্যায়ে না যায়। ভিন্নমত প্রকাশ করে দেওয়ার সুযোগই হচ্ছেÑ ‘টক শো’।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামতটি লিখেছেন আশিক রহমান
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন