আবাসন সমস্যা সমাধানে প্লট নয়, ফ্ল্যাট
ইকতেদার আহমেদ
সরকারি আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যার তুলনায় প্লটের আবেদন প্রত্যাশী অনেক বেশি হওয়ার কারণে আমাদের দেশে বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। বেসরকারি আবাসন প্রকল্পসমূহের অধিকাংশই নিচু কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাটপূর্বক গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার শহরের কেন্দ্রস্থল ও এর আশেপাশে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার মতো ভূমি অবশিষ্ট নেই। ঢাকা শহরের অদূরে এখন যে সকল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে তা অবলোকন পরবর্তী দেখা যায়, নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ের অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরে সরকারের পক্ষ হতে গত বছর ঘোষণা দেওয়া হয় সরকারিভাবে গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্পে প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাট বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকবে। সরকারের পক্ষ হতে যে মুহূর্তে এ ঘোষণাটি আসলো একই সময়ে এটি বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ক্ষেত্রেও কার্যকর করা অত্যাবশ্যক প্রতীয়মান হলেও নানা অজানা কারণে তা করা হয়নি। আর এ সুযোগে বেসরকারি আবাসন ব্যবসা লাভজনক বিবেচনায় আগের মতোই অব্যাহত আছে।
ঢাকা শহরে সরকারিভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকার কোনোটিরই এখন আর আবাসিক চরিত্র অক্ষুণœ নেই। এ সকল আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠা কালীন বিধিনিষেধ দেওয়া ছিল যে, এক বিঘা বা ১০ কাঠা সমন্বয়ে গঠিত প্লটে একটির অধিক দ্বিতল বা তৃ’তল বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে বিধিনিষেধ খুব বেশিদিন ধরে রাখা যায়নি। এখন এরূপ আবাসিক এলাকায় এক বিঘা সমন্বয়ে গঠিত প্লটসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে ৯ তলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এ সকল ভবন আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ বাস্তবতা হতে ধারণা করা যায়, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা যে সকল আবাসন প্রকল্পে এখনও ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এসব আবাসন প্রকল্পের প্লটেও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ হতে একক বাড়ির পরিবর্তে বহুতল ফ্ল্যাট গড়ে উঠবে।
বর্তমানে ধানমন্ডি, গুলশান, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর প্রভৃতি আবাসিক এলাকায় একক বাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত প্লটে যেভাবে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে এসকল বহুতল বাড়ির একটির সঙ্গে আরেকটির দূরত্ব স্বল্প হওয়ার কারণে এগুলোতে বসবাসরতরা পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সেদিন হয়তো খুব দূরে নয় যখন ধানমন্ডি গুলশানের একটির সঙ্গে আরেকটি স্বল্প দূরত্বে নির্মিত বহুতল ভবন ভেঙে বিস্তীর্ণ সবুজ চত্বরের ব্যবস্থা রেখে অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট বহুতল ভবনের নির্মাণের প্রশ্ন উঠবে। আমাদের সন্নিকটবর্তী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে বিস্তীর্ণ সবুজ চত্বর সমন্বয়ে গড়ে তোলা আবাসিক এলাকার মধ্যখান উন্মুক্ত রেখে দু’পাশে ৪০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণপূর্বক এক একটিতে কয়েকশ’ ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে নগরীর সবুজায়ন ও নির্মল বায়ু চলাচলের বিঘœতা রোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সিঙ্গাপুরের অনুরূপ সবুজ চত্বরের ব্যবস্থা করে অনধিক ১৫ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করে কয়েক’শ ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকা শহরে বসবাসরত সকল নাগরিকের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে আপাততঃ পৃথক প্লট বরাদ্দের পথ একেবারেই রুদ্ধ। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের আবাসনের ক্ষেত্রে এটি কঠোরভাবে মেনে না চলার আর কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় আমাদের ভূমি স্বল্প সে বাস্তবতায় আমরা শত চেষ্টা করলেও সরকারি বা বেসরকারি আবাসিক এলাকাসমূহের আবাসিক চরিত্র ধরে রাখতে পারব না। আর যদি ধরে রাখতে না-ই পারি তবে বিলম্ব নয় এখন থেকেই সিঙ্গাপুর অথবা ঢাকা সেনানিবাসের অনুকরণে নতুন আবাসন গড়ে তোলা হোক এবং পুরাতন আবাসনসমূহ সেভাবে বিনির্মাণ করা হোক।
লেখক : সাবেক জজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন