নরেন্দ্র মোদি চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভালবাসি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে সবসময় এড়িয়ে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। বিদেশ সফরে মোদির সঙ্গে থাকেন না কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি। দেশেও খুব একটা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় না। নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য জানতে গেলে ভরসা মূলত ‘মন কি বাত’, সংসদে ভাষণ, জনসভায় মোদির বক্তব্য বা টুইটার। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের অবকাশই রাখেন না তিনি। দুই বছরের মেয়াদ পার করা মোদির বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু বরাবরই ব্যতিক্রম মোদি। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। টাইমস নাওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কালো টাকা থেকে এনএসজি, বিরোধী কংগ্রেস থেকে পাকিস্তান বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা জবাব দিলেন মোদি। টাইমস অব ইন্ডিয়া
দুই বছর আগে সংসদের সেন্ট্রাল হলে প্রথম পা রেখেই মোদির ভাষণ ভারতের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছিল। সে দিনের কথা বলতে গিয়ে কিছুটা যেন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন তিনি। ‘সেই প্রথম আমি সেন্ট্রাল হলে প্রবেশ করলাম। তাও একেবারে প্রধানমন্ত্রী হয়ে। তার আগে তো আমি সাংসদও ছিলাম না। দিল্লি আমার কাছে নতুন জায়গা, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও নতুন। আমার দিকে ধেয়ে আসা প্রশ্নও নতুন।’ ওই সময়ের কথা বলতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘দেশজুড়ে তখন চরম হতাশা। কেউ জানেন না ৭ দিন বাদে বিদ্যুৎ থাকবে কিনা। কয়লা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েই লোকের মনে সংশয়। আমার প্রথম কাজ ছিল সেই হতাশা কাটানো। যেকোনো সমস্যাই এই সরকার মোকাবিলার চেষ্টা করছে- এই বিশ্বাসটা দিতে চেয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস আমি তা পেরেছি।’
গত দুই বছরে বারবার প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বাদ যাননি খোদ রাহুল গান্ধীও। কিন্তু মোদি মনে করেন কূটনৈতিক দুনিয়ায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা বেশ ওপরের দিকে। এ জন্য অবশ্য দেশের মানুষকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘গত ৩০ বছরে এদেশে কোনো স্থিতিশীল সরকার ছিল না। যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, তা যেকোনো সময়েই পড়ে যেতে পারত। সেই সরকারের প্রধানরা নিশ্চিতভাবেই দুর্বল ছিলেন। দেশের মানুষকে ধন্যবাদ, তারা আমাদের একটা স্থিতিশীল সরকার উপহার দিয়েছেন। অন্যান্য রাষ্ট্রও নজর রাখে, যার সঙ্গে কথা বলছি তার কথার জোর কতটা। নিজের দেশে সেই রাষ্ট্রপ্রধানের ওজন কতটা। সেই জায়গায় বিদেশের মাটিতে আমি বাড়তি সমীহ আদায় করতে পেরেছি।’ বিদেশ সফরের কথা ওঠায় খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে এনএসজি প্রসঙ্গ। মোদির বক্তব্য, ‘এনএসজিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত এই প্রয়াস চালাচ্ছে। যে দলই ক্ষমতায় এসেছে তারাই চেষ্টা চালিয়েছে। তবে আমাদের চেষ্টায় জোরটা ছিল বেশি। এই জমানাতেই এনএসজি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।’ কিন্তু চীনকে রাজি করিয়ে এনএসজিতে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব? এই প্রশ্নের জবাবে কিছুটা রক্ষণাত্মক মোদি। সম্ভবত বছর শেষের দিকে এনএসজি বৈঠকের আগে চীন সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করবেন না তিনি। মোদি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক কথাবার্তা চলছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে কোনো একটি সমস্যা নয়, অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওদের কিছু নৈতিক অবস্থান রয়েছে, আমাদেরও রয়েছে। সেই অবস্থানে পার্থক্যও রয়েছে। একমাত্র আলোচনাতেই সেই পার্থক্য ঘুচিয়ে আনা যাবে।’
অপর প্রতিবেশী পাকিস্তান সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো কথা কার সঙ্গে বলব? নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে, না অন্য কারও সঙ্গে? ফলে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা খুব সচেতন থাকি। দুটোই গরিব দেশ। গরিবির সঙ্গে লড়াইটা দুজনেরই। একে অপরের সঙ্গে না লড়ে, এই লড়াইটা আমি একসঙ্গে লড়তে চাই।’
বিদেশ ছেড়ে দেশের কথা ওঠে আসায় আগের সরকারের দুর্নীতির সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন মোদি। টেনে আনেন অগাস্টা দুর্নীতির প্রসঙ্গও। বলেন, ‘এই কেলেঙ্কারিতে অনেক বড় মাথা জড়িয়ে আছে ’।
কালো টাকা প্রসঙ্গে মোদির বক্তব্য, ‘আগে মানুষ ধরে নিতেন বড়লোকরা বিদেশের ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখবেন। এটাই যেন রীতি। এখন অন্তত সেই টাকা ফেরানোর কথা ভাবছেন। কালো টাকা ফিরবেই। প্রক্রিয়াগত জটিলতায় কিছু দেরি হচ্ছে এই যা।’ সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে নিজের কাজের দর্শন সম্পর্কে বলেন মোদি। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকবেই। কিন্তু তাকে দুশ্চিন্তায় পরিণত করতে চাই না। আমি চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভালবাসি।’ সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ