ভারত কেবল হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তিত কেন?
এসএনএম আবদি : ভারতের স্বাধীনতা দিবস এগিয়ে আসছে। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাঁক-জমকপূর্ণভাবে পালিত হয় দেশটির স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে গিয়ে ভারতে বসবাস করছে অনেক হিন্দু। এবারের স্বাধীনতা দিবসে তাদের সারাজীবনের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব উপহার দিতে যাচ্ছে বিজেপি শাসিত সরকার!
এটি অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনসম্মুখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য ভারতের দরজা খোলা থাকবে।
একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিটিজেনশিপ এ্যাক্ট-১৯৫৫ সংশোধন করে অভারতীয় হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছেন। সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হবে ১৮ জুলাই। এ অধিবেশনে তোলা হবে বিলটি। যাতে করে স্বাধীনতা দিবসের আগেই সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়।
তবে কেবল হিন্দুদের জন্য এতটা দয়াময় ও উদার হওয়া ভারতীয় সংবিধানের ১৫ আর্টিকেলের লঙ্ঘন। এতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করা নিষিদ্ধ। এছাড়াও ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের পক্ষ নেয়া আন্তর্জাতিক আইনেও নিষিদ্ধ।
মোদি প্রশাসনের ধর্মভিত্তিক উদারতায় সুবিধাভোগী বাংলাদেশ থেকে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে আনুমানিক ২ লাখ হিন্দু। তারা মূলত আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে বাস করছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ৪শ হিন্দু মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে।
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় মোদি জনসমাবেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা আমাদের ভাই’ এবং ‘ভারত মাতা’র সন্তান হিসেবে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। একই সাথে তিনি অহিন্দু শরণার্থীদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ায় সতর্ক করেন। মোদি আসামে ভোট চাওয়ার সময়ও একই সুরে কথা বলেছিলেন।
মোদি তার কথাও রেখেছেন। ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সরকারি প্রেস তথ্য ব্যুরো একটি বিবৃতি জারি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি ও বৌদ্ধর মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছুসংখ্যক মানুষ ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, মানবতাবোধ থেকেই সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে যারা এসেছে তাদের পাসপোর্ট অ্যাক্ট-১৯২০ ও ফরেন অ্যাক্ট-১৯৪৬ এর অধীনে কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ ও অবস্থান করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ প্রজ্ঞাপনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে যাওয়া অমুসলিম অভিবাসীদের যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই থাকার বৈধতা দেয়। এইভাবে ধর্মকে মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করা হাজার হাজার হিন্দু শরণার্থীকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন হিন্দু অভিবাসীদের ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে বসবাস করার অনুমতি দেয় এবং নাগরিকত্বের পথ স্পষ্ট করে।
ভারতের বিদ্যমান আইনে কোনো বিদেশি নাগরিক যদি দেশটিতে নাগরিকত্ব চায়, তবে তাকে বিরতিহীনভাবে ৭ বছর ভারতে অবস্থান করে আবেদন করতে হবে। তাই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে আগে যাওয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার এই প্রস্তাবনা ভারতীয় সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের স্পষ্টত লঙ্ঘন।
এছাড়াও ২০১৫ সালের এ প্রজ্ঞাপনের যৌক্তিকতা ও অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি ত্রুটিতে ভরপুর। যদি ভারত প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকারদের প্রতি মর্মাহত হয় ও মানবিক বিবেচনার কথা বলে, তাহলে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত হাজারো রোহিঙ্গাদের জন্য দিল্লি কেন কিছু করছে না?
ভারতীয় কূটনৈতিক সাথিয়াব্রাতা পাল স্পষ্টভাবেই বলেন, মোদি সরকারের এমন উদ্যোগ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বকে আরও জোরদার করবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের বিচ্যুতি ঘটাবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের মতো বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত মিত্রকে সতর্ক বার্তা পাঠাবে। এ প্রজ্ঞাপন ও বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে শেখ হাসিনার বাংলাদেশি হিন্দুদের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ বাড়িয়ে দেবে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
আরব নিউজ থেকে অনুবাদ করেছেন এম রবিউল্লাহ ও মমিনুল ইসলাম।