২ বছর শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল হায়দার গিলানিকে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিন বছর আগে পাকিস্তানের মুলতান শহর থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ছেলে আলী হায়দার গিলানিকে অপহরণ করে আল-কায়েদা জঙ্গিরা। এরপর তাকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে দুবছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন হায়দার গিলানি। বিবিসি
আল-কায়েদা জঙ্গিরা তার বাবা ইউসুফ রাজা গিলানির উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তাকে অপহরণ করেছিল। কারণ ওসামা বিন লাদেনকে যখন হত্যা করা হয়, ইউসুফ রাজা গিলানি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। অপহরণের পর জঙ্গিরা মুক্তিপণ দাবির করার পাশাপাশি পাকিস্তানের কারাগারে আটক আল-কায়েদার কয়েকজন বন্দির মুক্তিও দাবি করেছিল। জঙ্গিদের হাতে বন্দি অবস্থায় গত তিন বছর কেমন ছিলেন গিলানি? আর কিভাবে তিনি ফিরে আসলেন? বিবিসির কাছে সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি। গিলানি বলেন, অপহরণের পর তাকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের কটি ছোট্ট কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল এবং একবছর বাইরের কোনো কিছু দেখতে দেওয়া হয়নি। সূর্যের আলো কী জিনিষ সেটি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।
গিলানিকে যে জায়গায় আটকে রাখা হয়েছিল, সেটি ছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে মার্কিন বাহিনীর ড্রোনের আওয়াজ শুনে মনে হতোÑ যেন একটি বড় মৌমাছি মাথার উপর বিকট শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটি নয়, একসাথে চার-পাঁচটি ড্রোন হামলা করত। ওই এলাকায় ড্রোনহামলা জোরদার হলে আল-কায়েদা জঙ্গিরা তাকে পাকিস্তানি তালেবানের হাতে হস্তান্তর করে। এ সময় তার খানিকটা উন্নতি হয়। তারা তাকে শিকলে বেঁধে রাখত না। তাকে হাঁটার সুযোগ দিত। খবরা-খবর শোনার জন্য তালেবানরা তাকে একটি রেডিও দিয়েছিল।
তালেবানের হাতে আফগানিস্তানে প্রায় দুই মাস ছিলেন। মে মাসের নয় তারিখে তালেবানরা তাকে জানিয়েছে, জায়গাটি তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তারা খবর পেয়েছে যে মার্কিন বিমানহামলা চালাবে। গিলানি বলেন, আমরা রাতে সে জায়গা ছেড়ে দিলাম এবং তিন-চার ঘন্টা হাঁটার পর বোমা নিক্ষেপের শব্দ শুনতে পেলাম। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গিলানি। তখন একজন এসে আমাকে বললেন আমার শার্টটি খুলতে। তারপর একজন এসে সেটি দিয়ে আমার হাত বাঁধে ফেললেন।
এরপর আমি নিজেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ছেলে বলে পরিচয় দিলেও তারা সেটি বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু পরে তারা যখন বুঝতে পারলেন আমি সত্য কথা বলছি তখন এরপর একজন ব্যক্তি বললেন, গিলানী আপনি মুক্ত। আপনি এখন বাড়ি যাচ্ছেন। যে ব্যক্তিটি একথা বললেন তিনি ছিলেন আমেরিকান বাহিনীর একজন সদস্য। তালেবানবানদের লক্ষ্য করে তারাই এই হামলা চালিয়েছিল। এভাবেই তিন বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন আলী হায়দার গিলানি। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ