ভূমি মন্ত্রণালয়ের জলমহাল শাখায় দুর্নীতিবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমি মন্ত্রণালয়ের জলমহাল শাখায় ‘উন্নয়ন স্কিমের’ নামে বিতর্কিত প্রায় অর্ধশতাধিক জলমহাল ‘লিজ’ দেওয়ার জন্য ‘ফাইলপত্র’ তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মন্ত্রণালয়ের ও মন্ত্রণালয়ের বাইরের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের মতো একটি দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্বেষী চক্র সুকৌশলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রীর অগোচরে ‘জাল যার জলা তার’Ñ এ বিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলেছে নৈরাজ্য। ফাইল থেকে গায়েব করা হচ্ছে নানারকম ‘চিঠিপত্র’ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ তোয়াক্কা না করে সুনামগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন জলমহালের বহু ফাইলে এরকম জালিয়াতি ও অনিয়ম করা হচ্ছে। জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন ‘শয়তানখালী নদী ৫ম খ-’ নামক জলমহালটি উপজেলার ভাটিধল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ৬ বছরের জন্য উন্নয়ন স্কিমের আওতায় ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এর জন্য একটি মহলকে উৎকোচবাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। বাস্তবে আলোচ্য জলমহালটি সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগকারী কালনী নদীর একটি অংশ। এ নদীর একটি মাথায় পুরো বাঁধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ‘শয়তানখালী নদী ৫ম খ-তে’ প্রায় ৯০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত পানি থাকে। তাই গভীর নদী হওয়ায় এটি উন্নয়ন স্কিমের আওতায় আনার বা সংস্কার করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ‘ডিও’ লেটারে বলেছেন। এছাড়া উপজেলার সমবায় অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকেও ‘উন্নয়নস্কিমে’ না দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে শতাধিক মৎস্যজীবী এ প্রতিবেদককে জানান, একটি মাত্র ব্যক্তির স্বার্থে উন্নয়ন স্কিমে দেওয়া হলে জলমহালটির উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হবে। যা সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯-এর পরিপন্থী হবে। বিধান অনুযায়ী এটি সাধারণ টেন্ডারে প্রতি তিন বছরের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ইজারা না দিয়ে বিশেষ স্বার্থে বিশেষ এক ব্যক্তিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে উন্নয়ন স্কিমে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে।
ইতোপূর্বে বিএনপি-জামায়াতের তা-বে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কালনীর কূলে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবীর হোসেন জানান, এ জলমহালটি অতীতে কখনও উন্নয়ন স্কিমের আওতায় ছিলই না। এছাড়া জেলা থেকে এটি ইজারা দেওয়া হলে কমপক্ষে পাঁচটি মৎস্যজীবী সমিতি অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে ব্যাপকভাবে মৎস্যজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আকরাম হোসেন বলেন, কেউ যদি এ জলমহাল উন্নয়ন স্কিমে দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা লেনদেন করে থাকে তা আমি জানি না। এছাড়া উপর থেকে যদি এ জলমহালের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা থাকে তাও বলতে পারব না। তবে এখানে কোনো অনিয়ম অন্যায় হবে না।
জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ‘জলমহাল সংক্রান্ত’ বৈঠক হতে পারে আগামী ১০ জুলাই।