শিশু শিক্ষার্থীরা গিনিপিগ?
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমনিতেই একটা হযবরল অবস্থা। তবে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে একটা উন্মাদনা যে আছে, তা প্রমাণিত হলো পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকছে কি থাকছে না এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক এ গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কর্মকা-ে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করায় পিইসি পরীক্ষা এবছর থেকে তুলে দিয়ে অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষাকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করার যে প্রস্তাব উঠেছিল, মন্ত্রিসভা তা নাকচ করে দিয়েছে।
বিভ্রান্ত ও বিস্মিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজ। যেন তাদের সঙ্গে তামাশা করছে রাষ্ট্র। গত ২১ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা আর থাকবে না। একেবারে অষ্টম শ্রেণি শেষে হবে এই পরীক্ষা।’ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যখন কোনো বিষয়ে এমন ঘোষণা দেন, মানুষ সেটাকে সরকারি ভাষ্য হিসেবেই গ্রহণ করে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি সেভাবে আসে। ঘটেছিলও তাই। কিন্তু পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বদল প্রমাণ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যা বলেন তা আসলে সরকারের বক্তব্য নয় কিংবা নিশ্চিত না হয়েই বলেন।
গতমাসে প্রথমবারের মতো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর ঘোষণা করে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, শেষবারের মতো এবছর পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হবে। কয়েকদিনের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত গত সোমবার নাকচ করে দিল মন্ত্রিসভা। প্রশ্ন হলো, শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন?
পিইসি ও জেএসসি এ দুটি পরীক্ষার কারণেই শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোথায় সরকার তাদের পরীক্ষা কমিয়ে তাদের চাপমুক্ত রাখবে তা নয়, উল্টো তাদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে। পরীক্ষা কমলে শিক্ষার্থীদের কোচিং ও গাইডবই নির্ভরতাও কমে আসবে। কোচিং ব্যবসা ও গাইডবইকে নিরুৎসাহিত করতে পরীক্ষা কমানোর বিকল্প নেই। আর সবাই আশা করে, আগামীতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ভেবেচিন্তে। বারবার সিদ্ধান্ত বদল আসলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তামাশা।
লেখক : পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন