বাড্ডায় ১৪ তলা আবাসিক ভবনে আগুন আতঙ্কে ১১৭টি পরিবার, তদন্ত কমিটি
মাসুদ আলম : রাজধানীর উত্তর বাড্ডা বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত ৩টায় ১৪ তলা ওই ভবনের নিচ তলার একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনটির নিচ তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত আসবাবপত্রের দোকানের সবকিছু পুড়ে গেছে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ জানা যায়নি। ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত ফার্নিচারের দোকান। ৬ষ্ঠ তলা থেকে আবাসিক ফ্ল্যাট।
ভবনটিতে ১১৭টি আবাসিক ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটগুলোতে তিন শতাধিক মানুষের বসবাস। আগুনে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের অধিকাংশ বাসিন্দারা বাসা ছেড়ে আত্মীয় বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার গ্রামে চলে গেছেন। আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচ তলায় মাটিতে কাপড় বিছিয়ে দুটি পরিবার বসে রয়েছে। চেহারায় তাদের আতঙ্কের ছাপ। কথা বলতে চাইলে বিরক্ত হয়ে বলে, কি জানতে চান? ১১৭টি পরিবার এই ভবনগুলোতে বাস করত। আগুন লাগার পর সকল পরিবার নিরাপদে ছাদে আশ্রয় নেয়। বলার কিছু নেই । আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছে। আগুনের তাপে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা এখন আতঙ্কে আছি। আগুনের ঘটনায় এখনও কোনো নিহতের খবর পাইনি। তবে আগুনের ধোঁয়ায় প্রায় ৩০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভবনের বাসিন্দরা কে কোথায় আছে বলতে পারব না। বিটিআইয়ের পক্ষ থেকে আপনাদের কিছু বলা হয়েছে? জানতে চাইলে তারা বলেন, মালিকপক্ষের কারো তো দেখাই পাই না। উনারা হয়তো পুলিশ বা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। ভবনের বাসিন্দারা তাদের আত্মীয়র বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, ভবনের বাণিজ্যিক অংশের আসবাবপত্রের দোকানের দাহ্য সামগ্রীর কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের বেগ পেতে হয়। প্রগতি সরণির লাগোয়া পাঁচ ইউনিটের বড় ওই কমপ্লেক্সে চার পাশ থেকে আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট জায়গা না থাকায় এবং পানির উৎসের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। আশপাশের ভবনগুলো থেকে পানি নিয়ে পেছনের সরু গলি দিয়ে ঢুকে আগুন নেভানো তাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে হোস দিয়ে পানি ছোড়া হলেও তা আসবাবের দোকানের ভেতরে গভীর অংশে ঠিক মতো পৌঁছাচ্ছিল না। ভবনের বাসিন্দারা ছাদে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে তাদের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ইন্সপেক্টর পলাশ চন্দ্র মোদন জানান, আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন জানান, আগুনে কেউ আহত হননি। তবে বয়স্কদের কেউ কেউ উৎকণ্ঠা ও ধোঁয়ায় অসুস্থ বোধ করায় তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মজিবুর জানান, ভোর রাতে হঠাৎ দেখি আগুন জ্বলছে। ধোঁয়া উপরের দিকে উঠতে শুরু করলে এবং আশপাশের মানুষের হাঁকডাকে ভবনের আবাসিক অংশ থেকে অনেকেই পরিবার ছাদে আশ্রয় নেয়। সে সময় পাশের একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেও ওই ভবনের বাসিন্দাদের বেরিয়ে আসতে বলা হয়।
ভবনটি পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভবনটিতে। ফাটল পরীক্ষা না করিয়ে এই ভবন ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি রাজউক ও বুয়েট অনুমোদন দেওয়ার পরই ভবনটি ব্যবহার করা উচিত। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
অপরদিকে বিটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এফ আর খান সাংবাদিকদের বলেন, রাজউকের অনুমোদন নিয়েই ভবনটি করা হয়েছে। আমরা পুরো ভবন দেখেছি। ভবনটির মূল কাঠামোতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। আমরা তো দেখেছি তবে তৃতীয় পক্ষের পরামর্শক্রমেই ভবনটি ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি