সুষ্ঠু তদন্ত না হলে বাবুল ও তার শ্বশুর মুখ খুলবেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। একের পর এক গ্রেপ্তার হলেও এখনও স্পষ্ট করে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়নি এই ঘটনার পেছনে কার হাত রয়েছে। পুলিশ শুরু থেকে এই পর্যন্ত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে যে ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে তার অনেক কিছুই এখন নেই। শুরুতে বলা হয়েছিলো, বাবুল জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এই কারণে জঙ্গীরাই তার স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সেই রকমই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাউকেই জঙ্গী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি বরং ভাড়াটে খুনী হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, বাবুলকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তাকে নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মুখোমুখি করা হয়েছে। যদিও বাবুলকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও এখনও ঘটনার মূল নায়ক ও নির্দেশদাতাকে বের করতে পারেনি পুলিশ। এই কারণে এই খুনের ঘটনা নিয়ে দিনদিন রহস্য বাড়ছে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে বলেও মিতুর বাবা অভিযোগ করেছেন।
মিতুর পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই মামলার তদন্ত সুষ্ঠুু ভাবে হচ্ছে না। তাদের আশা তদন্ত সুষ্ঠু হবে ও প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পরবে। আর তা না হলে মিতুর স্বামী বাবুল ও বাবা মোশাররফ হোসেনও মুখ খুলবেন। তাদের কাছে এখন অনেক পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকাই রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এসপি বাবুল দীর্ঘদিন পুলিশে রয়েছেন। তার সাফল্যের কথা সবাই জানে। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতন, যৌতুক দাবি কিংবা পরকীয়া সংক্রান্ত কোন অভিযোগ উঠেনি। এমনকি তার স্ত্রীও কোনদিন তার বাবা মায়ের কাছে বাবুল আক্তারের ব্যাপারে অভিযোগ করেননি। যদিও কথা উঠে মিতুর পরকীয়া ছিলো। পরে বাবুল আক্তার সম্পর্কেও এমন তথ্য শোনা গেছে। কিন্তু এসব ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারাও কিছু স্পষ্ট করতে পারেননি।
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, তার জামাতা নির্লোভ ও সফল পুলিশ কর্মকর্তা। বাবুলের বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ ও এই কারণে মিতু হত্যায় জড়িত সেই ধরনের অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। পরকীয়ার ব্যাপারেও মিতুর বাবা দাবি করেন, তাদের কারো পরকীয়া ছিলো না। থাকলে অন্ততটি বিষয়টি পারিবারিক পর্যায়ে কিংবা বন্ধুবান্ধব পর্যায়েও আলোচনা হতো, কেউ না কেউ জানতো। কিন্তু সেই রকম কেউ নেই। তাই এই ধরনের অভিযোগও ধোপে টিকছে না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তার যখন পদোন্নতি পান তখন তাকে নেওয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি ও সিএমপি সব অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। যে বাবুলকে নিয়ে পুলিশের সব বিভাগের এত আগ্রহ; হঠাৎ এমন কি হলো তার ব্যাপারে এত নেতিবাচক কথা প্রচার করা হচ্ছে।
মিতু হত্যার সঙ্গে বাবুল জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহও কেউ কেউ করছেন। তবে এসব সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছে মিতুর পরিবার। তারা মনে করছেন, বাবুল যদি এই ধরনের কোন পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে সে বেছে বেছে তার ঘনিষ্ট সোর্সকে কেন ব্যবহার করবে? সন্তানের সামনেই কেন কাজটা করাবে?
বাবুলের শ্বশুড়ের আশঙ্কা বাবুলের কারণে যারা সমস্যায় ছিলো, আয় ভাল করতে পারছিল না, বিভিন্ন ধরনের বাধা আসছিলো তারা নিজেরা বাঁচতেই এই ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দিকেও সন্দেহের তীর ছুঁড়েছেন। তার মতে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাবুল নির্মম ষড়যন্ত্রের শিকার।
এদিকে, বাবুলের শ্বশুর এখনও আশাবাদী ঘটনা যেই দিকেই ধাবিত করার চেষ্টা হোক না কেন সত্য প্রকাশিত হবেই। আর রহস্য উন্মোচন না করে চেপে রাখা হলে তিনি মুখ খুলবেন। তিনি মুখ খুললে কেবল ষড়যন্ত্র শেষ হবে তাই নয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় কর্মকর্তারও মুখ বন্ধ হবে। বাবুলের ব্যাপারে গণমাধ্যমে যেসব নেতবিাচক কথা আসছে এগুলো তারা বিশ্বাস করছেন না।
সূত্র জানায়, বাবুল এখনও পর্যন্ত তার শ্বশুর বাড়িতে আছেন। তাকে নিয়ে যখন বিভিন্ন নেতিবাচক খবর প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে তার শ্বশুর তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। এখন যা হচ্ছে তা সুষ্ঠু নয়।
এদিকে সূত্র জানায়, বাবুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর বাসায় ফিরে আসলেও তেমন কোন কথা বলছেন না। তিনিও অপেক্ষা করছেন। নিজেও ঘটনার পেছনের ঘটনা জানার চেষ্টা করবেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই। তিনি ও তার শ্বশুর চাইছেন, মামলাটি সঠিক তদন্ত হোক। প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হোক। বাবুল ও তার শ্বশুর বিভিন্ন মামলার তদন্ত করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতাও এই ব্যাপারে কাজে লাগাবেন। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি