ঢাকার পর প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন রংপুরের মেয়র
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র সরফুদ্দীন পেলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা। গতকাল বুধবার তাকে এই মর্যাদা দিয়ে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, তিনি মেয়র পদে থাকাকালে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এর আগে ২১ জুন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে পূর্ণ মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। আর গতকাল পেলেন রংপুরের মেয়র।
তবে আরও কয়েকটি সিটি করপোরেশনে মেয়র থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসনের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, এটা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনার উপর।
এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মান। এটা সিটি করপোরেশনের আইনে নেই। এর আগেও একইভাবে ঢাকার মেয়ররা মন্ত্রীর পদ মর্যাদা পেয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেকও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন এই পদমর্যাদা প্রাপ্ত মেয়ররা যতদিন কার্যক্ষেত্রে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত বলবৎ তারা এ পদে বহাল থাকবেন। এটা তাদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মান।
আব্দুল মালেক বলেন, পরবর্তীতে আবার মেয়র নির্বাচন হলে মেয়ররাও মন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন তা কিন্তু নয়। এবারের জন্য তাদের এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সরকার প্রধান চাইলে তাদের পদমর্যাদা ঠিক করবেন।
জনপ্রশসাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ কোনো মেয়রেরই পদমর্যাদার বিষয়টি নির্দিষ্ট করা নেই। সিটি করপোরেশন আইনেও মেয়রদের পদমর্যাদা বিষয়ে কিছু বলা নেই। তাই সরকারগুলো নিজেদের মতো করে পদমর্যাদা নির্ধারণ করে দেয়। তিনি বলেন, ব্যক্তি বিশেষের উপর এই পদ মর্যাদাগুলোর প্রাপ্তি ঘটছে। দেশের বাকি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কিনা এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটা আসলে বলা যাচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিএনপি দলীয় মেয়রদের পর্যাদা না দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ তারা অনেকেই মামলা হামলার সঙ্গে যুক্ত। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১১টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় এরই মধ্যে খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব সিটি করপোরেশনগুলোর বেশিরভাগই বিএনপি সমর্থক। এসব মেয়রদের বেশির ভাগই এখন বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত, কেউ কেউ জেল খাঁটছেন।
জানা গেছে, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায় খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র মন্ত্রী এবং অন্য সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এরশাদ সরকারের সময়ে ঢাকার মেয়র হিসেবে নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে প্রথম প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমলের দুই মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মোহাম্মদ হানিফ পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। সরকারগুলো এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই মর্যাদা নিশ্চিত করেন। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর এতদিন দুই মেয়রের পদমর্যাদা সুনিশ্চিত করা হয়নি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি