‘বিদেশি সফটওয়্যার বিদায় করে দেশীয় সফটওয়্যারকে শক্তিশালী করবো’
ফারুক আলম : যখন কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের বাজার বড় ছিল না সেসময় দেশীয় সফটওয়্যার দিয়ে নিজস্ব অনেক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে। এমনকি তখন সফটওয়্যার রফতানিও করা হয়েছে। ৮৭ সালের পর কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের মাধ্যমে এটি জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তখন থেকে আমরাই প্রযুক্তির বাজার তৈরি করেছি। অথচ এখন দেশীয় কোম্পানিগুলোর উপর কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ায় বিদেশি কোম্পানির সাথে পেরে উঠা যাচ্ছে না। বেসিসের নব-নির্বাচিত সভাপতি মোস্তফা জব্বার একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান দেশের সফটওয়্যার বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ করতে না পারার কারণ হিসাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় কোম্পানিগুলোর উপর এমন কিছু শর্ত দিয়ে দেয়া হচ্ছে যার জন্য কোম্পানিগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখতে পারছে না। কিন্তু বাংলাদেশের সফটওয়্যার এবং সেবা খাত এটা বাংলাদেশের হাতেই থাকা উচিৎ। কোনোভাবেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রাসন আমরা গ্রহণ করতে পারি না। আমরা এটাকে প্রতিহত করবো।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বেসিস নির্বাচনে আমার যে প্যানেল ডিজিটাল ব্রিগেট, সেখানে স্পষ্টভাবে আমরা একটা সেøাগান দিয়েছি ‘দেশের পক্ষে দেশের সফটওয়্যার দেশের সেবা খাতের পক্ষে’। ’৬৪ সালে বাংলাদেশে যখন প্রথম কম্পিউটার আসে। তখন হানিফ উদ্দিন মিয়া ঐ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করেছেন। পরবর্তীকালে পার্সোনাল কম্পিউটারের সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে এবং আমরা সেসময় সুইডেনে সফটওয়্যার রপ্তানিও করেছি। এরপর বাংলাদেশের লোকজন নানা ধরনের উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়েছে, নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করেছে, নানা ধরনের সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন ব্যাংকিং সফটওয়্যার খুব জনপ্রিয়, এটি দেশীয় কোম্পানিগুলোই ডেভেলপ করেছে।
বেসিস সভাপতি বলেন, বেসিস দেশের পক্ষে ও দেশীয় সফটওয়্যারের পক্ষে। আমরা দেশীয় সফটওয়্যার ও সেবা খাতকে সমৃদ্ধ করতে চাই। আমার দেশের বাজার আমার জন্য। বিদেশি আগ্রাসন মোকাবিলা করে দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার দখল করতে হবে। আগামী দিনে বাংলাদেশের সফটওয়্যার বাজার ইউরোপের চেয়েও বড় হবে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্রচারণা আরও বাড়বে। এই যুদ্ধ করার জন্যই নির্বাচন করেছি। এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার নিশ্চিত করা। আমার নিজের সফটওয়্যার যদি ভালো না হয় তাহলে বিদেশি সফটওয়্যার বিদায় করবো কিভাবে। সুতরাং নিজেদের সফটওয়্যার শক্তিশালী করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ককে বুঝায় বলে মনে করেন এই প্রযুক্তিবিদ।
তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে জনগণ পর্যন্ত সবগুলো মাধ্যমের পুরোটা ডিজিটালে রূপান্তর করাই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বেসিস ২০০৯ সাল থেকে সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। টেকনোলজি তৈরি করা, টেনলোজির প্রয়োগ করা এবং এই ক্ষেত্রগুলোকে বিষেশায়িত করা, আইনগত কাঠামো তৈরি করা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বেসিস অব্যাহত কাজ করে আসছে। অন্য যেকোনো ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের মতো বেসিসও একটি ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন। তবে বেসিস অত্যন্ত শক্তিশালী ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনে পরিণত হয়েছে। এজন্য বেসিসের নির্বাচনসহ অন্যান্য কর্মকা-ে সবার আগ্রহ বেড়েছে। কোনো মানুষ যখন আইটি বিষয়ে ব্যবসায়ী হতে চান তখন তাকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব বেসিসের। আইসিটি খাতে বহু ধরনের ব্যবসা হয়েছে। কেউ কোম্পানি করে ব্যবসা করছেন কেউ ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং করে ব্যবসা করছেন। তবে যিনি কোম্পানি করে ব্যবসা করছেন তাকে ব্যবসায়ী নীতি মানতে হবে। বেসিস কাজ করছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। তবে আউটসোর্সিং করে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সচেতন করার কাজটি করছে বেসিস। বেসিসের স্বপ্নই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
আউটসোর্সিং করে বিদেশ থেকে আয়ের মাধ্যম ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার বিষয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, চধুঢ়ধষ বাংলাদেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বেসিসের কোনো দায়িত্ব নেই। প্রতিষ্ঠানটি আসবে সরকারের সঙ্গে কথা বলে। চধুঢ়ধষ বাণিজ্যিক সংগঠন। তারা ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশে আসবে। আমরা চিৎকার করলে তারা বাংলাদেশে আসবে না। এই প্রতিষ্ঠানটি যদি বোঝে বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে তাহলে নিজের ইচ্ছায় এ দেশে আসবে। না আসলে ব্যবসা করতে পারবো না এ ধরনের মানসিকতা থাকা উচিত নয়। চধুঢ়ধষ ছাড়াও বাংলাদেশে টাকা আসছে। এটি কোনো বড় সমস্যা না। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম