উৎসেকর ও শুল্ক কমিয়ে সংসদে অর্থ বিল পাস আজ পাস হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট
বিশ্বজিৎ দত্ত : তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যের রপ্তানিমূল্যের উপর শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে কর ধার্য ও আরী কয়েকটি পণ্যের কর , ভ্যাট শুল্কহারে সংশোধনী এনে অর্থবিল-২০১৬ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যে ১.৫ শতাংশ উৎসে কর কাটার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এনিয়ে পোশাক শিল্পমালিক ও এফবিসিআিই রপ্তানিতে উৎস্যকর কমানোর প্রস্তাব করেছিল। অন্যদিকে আজ জাতীয় সংসদে পাস হবে ২০১৬-১৭ সালের বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি। বাজেটে ঘাটতি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই বাজেটকে বলেছেন, সামাজিক সমতার বাজেট।
সংশোধনীগুলোর মধ্যে রয়েছে, তথ্য- প্রযুক্তি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুটি বিষয়সহ বেশকিছু প্রস্তাবে পরিবর্তন আনতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার নিজের দেওয়া বাজেটের উপর সমাপনী বক্তৃতা শেষে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাবকে আমি অনুশাসন মনে করি, কারণ আমি তার হয়েই কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তার সব প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সঙ্গে এই অর্থবিল উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। বাজেটের উপর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বক্তৃতা করেন। পরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় কয়েকটি প্রস্তাবে সংশোধনী আনতে বলেন। অর্থমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো গ্রহণ করে ‘সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনে আনীত অর্থবিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করলে পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বাজটে প্রস্তাবে যেসব সংশোধনি আনা হয়েছে মেডিকেল সেবাকে আবারও ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হবে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও মেডিকেল ও সার্জিক্যাল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। শিল্পখাতের মূলধনী যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও কিছু যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে এই সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি ও রেয়াতি সুবিধা আগামী বছরও কার্যকর থাকবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে শিশুপার্ক ও এমিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণে যন্ত্রপাতি আমদানি ও রাইডের ক্ষেত্রে শুল্ককর রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের রেফ্রিজারেটর এবং হিউমিডিটি চেম্বার ছাড়াও ওষুধ শিল্পের কিছু কাঁচামাল ও সরঞ্জামের কর ‘সুষম’ করা হবে। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ শিল্পের কিছু কাঁচামালের শুল্ককর কমানো হবে এবং উৎপাদিত পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। তথ্য প্রযুক্তি খাতের পণ্য, সিম কার্ড, স্মার্ট কার্ড, সার্ভার ব্যাংক, ফাইবার অপটিক কেবল তৈরির কাঁচামালের উপর আরোপিত শুল্ককর কমানো হবে। ই-কমার্সের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হবে এবং ই-কমার্সে ভ্যাট থাকবে না।কম্পোজিট এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সহজলভ্য করতে আমদানি শুল্ক করা হয়েছে ৫ শতাংশ।পোল্ট্রি খাতের কিছু উপকরণের ক্ষেত্রে শুল্কহার রেয়াত হবে। এর বাইরেও প্রস্তাবিত বাজেটে আরও কিছু সংশোধনী আনেন অর্থমন্ত্রী।একজন করদাতার অনুমোদনযোগ্য কর রেয়াতের সীমা প্রস্তাবিত ২০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ হবে এবং রেয়াতের হার আয়ভেদে ১০, ১২ এবং ১৫ শতাংশ হবে। বর্তমানে যে সার্বজনীন আয়বছর জুলাই-জুন নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তারা তাদের মূল কোম্পানির সঙ্গে মিলিয়ে হিসাব রাখতে পারবে। যেখানে ডিস্ট্রিবিউটরের লাভ ঘোষিত হয় না সেখানে লাভের অনুমতি কমিশন প্রস্তাবিত ১২ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ হবে। প্রাকৃতিক রাবারের উৎপাদন পর্যায়ে প্রস্তাবিত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হবে; অর্থাৎ ভ্যাট আরোপিত থাকবে। তামাকজাত পণ্য নিরুৎসাহিত করতে ৪৫ টাকা ও তার বেশি এবং ৭০ টাকা ও তার বেশি মূল্যস্তরের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্কের হার গত অর্থবছরের চেয়ে ২ শতাংশ করে বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে কতিপয় পণ্যের ট্যারিফ বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেগুলোতেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধন অনুযায়ী, সি আর কয়েল থেকে রঙিন জিপি শিট/কয়েল প্রতি টনে ৭ হাজার টাকা এবং এইচ আর কয়েল থেকে রঙিন জিপি শিট/কয়েলের ট্যারিফ প্রতি টনে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা হবে। এমএস প্রোডাক্টের মত সিআর কয়েল বা এইচআর কয়েল থেকে সিআই শিট বা জিপি শিট বিপণনে প্রতি মেট্রিক টনে ট্যারিফ হবে ১ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৩৪ টাকা। দেশে উৎপাদিত প্রতিটি রিডিং গ্লাসের ও প্লাস্টিক ফ্রেমের ট্যারিফ ৪৫ টাকা এবং মেটাল ফ্রেমের ট্যারিফ ৫৫ টাকা হবে। চা উৎপাদনে প্রণোদনা দিতে ট্যারিফ হবে প্রতি কেজি ১ দশমিক ৬ ডলার। প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া রেজিনের ট্যারিফ ন্যূনতম ৯০০ ডলার হবে এবং এর উপর শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে। এক কেজি তাজা ফুলের ন্যূনতম ট্যারিফ ১ ডলার হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল স্ট্রিপিং কেমিক্যালে আমাদনি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশ হবে। স্পিনিং মিলের কাঁচামাল ফ্ল্যাক্স ফাইবারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমে হবে ৫ শতাংশ। ডেনিম শিল্পের কাঁচামাল স্প্যানডেক্স/ইলাসটো মেট্রিক আমদানির উপর শুল্ক ১০ শতাংশ কমে ৫ শতাংশ হবে। অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় বোল্ডার স্টোন চিপসের শুল্ক ও কর কমানো হবে।