এলো আবার খুশির ঈদ
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশসহ পুরো দুনিয়ার মুসলমানরা ঈদুল ফিতর পালন করবে। এ উপলক্ষে প্রতিটি মানুষকে জানাই আগাম ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ঈদ কেবল আনন্দোৎসব বা ভোগাসক্তি নয়, ইবাদতও বটে। এই ইবাদতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনন্দ। উৎসবের উচ্ছাসে ইবাদত যেন চাপা না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ যেন আমাদের ধর্মীয় আনন্দোৎসবের আমেজকে বিস্বাদ করে না দেয়। রোজার শেষে ঈদের শিক্ষা ও আনন্দ আমাদের জীবনের বাকি ১১ মাসকেও যদি প্রভাবিত করে তা হলে স্বার্থকতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছতে সময় লাগবে না বেশি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দরদি কণ্ঠে ধ্বনিত ঈদুল ফিতরের সারবত্তা ও মর্মভাষ্য।
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনারে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ,
তোর সোনা দানা বালা খানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ।’
মুসলমানদের অনন্য সাধারণ জাতীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। ঈদ মানে খুশী, ঈদ মানে আনন্দ। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যারা রামাজানকে অতিবাহিত করেছে ঈদ তাদের জন্য। এক মাস সংযম সাধনার মাধ্যমে মুমিনগণ আত্মশুদ্ধির যে প্রচেষ্টা চালান, ঈদুল ফিতর তারই পূর্ণতার সুসংবাদ। ইন্দ্রিয়বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ, কলুষ, অন্যায়, মিথ্যা, অনাচার থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়বৃত্তির পথে প্রত্যাবর্তনের সাধনার পর আসে ঈদ। মানব জীবনকে ন্যায়, সত্য, মানবিকতা আর ভ্রাতৃত্ববোধের অর্থে প্রবাহিত করাই ঈদের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য। মহানবি সা. বলেন, ‘প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ-উৎসব হচ্ছে এই ঈদ।’ বুখারি, ১খ, পৃ. ৩২৪
এ দিন আনন্দ-উৎসবে ধনী-দরিদ্র, ছোটবড় সকলে মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার দিন। এ দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিগণ দুস্থ, অভাবগ্রস্থ ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন ফিতরা। ফেতরার উদ্দেশ্য হল দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ হতে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান। উৎসবের সাথে সম্পদ বণ্টনকে সমন্বিত করে দেওয়ায় ঈদ হয়ে উঠেছে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও মহীয়ান। হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন ওমর রা. বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সা. মুসলমান কৃতদাস, আজাদ পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সকলের উপর সাদাকায়ে ফিতির এক সাআ খেজুর বা যব নির্ধারণ করেছেন এবং মানুষ ঈদগাহে রওনা হবার পূর্বে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন। সাদাকায়ে ফিতির হচ্ছে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার থেকে রোজাকে পবিত্র করার এবং গরিবদের (মুখে) অন্ন দেয়ার জন্য। মিশকাত হাদিস নং ১৮১৫, ১৮১৮
আসুন! পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশ্ব মানবের সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় কায়মনোবাক্যে মুনাজাত করি। কামনা করি হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি এবং জুলুম হতে মুক্তি পাক সব মানুষ; ইসলামের সুমহান আদর্শ সকল পাপ দগ্ধ চিত্তকে আলোকিত করুক; অবসান ঘটুক আমাদের দেশ ও সমাজের সকল অস্থিরতা ও অসঙ্গতির। সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূরীভত হয়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন দৃঢ়তর হোক। একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, আমাদের বাংলাদেশ। সকলের জীবনে সুনিশ্চিত হোক শান্তি ও সমৃদ্ধি। হাসি-খুশি ও আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। সবাইকে পবিত্র ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, ঈদ মুবারক আস সালাম।
লেখক: অধ্যাপক, ওমর গণী কলেজ চট্টগ্রাম