মুমিনের গায়ে বসন্তের ছোঁয়া
মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ
পৃথিবীর চিরাচরিত একটি ধারা হচ্ছে বদল বা পরিবর্তন। সৃষ্টির শুরু থেকেই এর সূচনা। রাতের পর দিন হয়। মাটির ঘর টিনে আর টিনের ঘর ইটের দেয়ালে রুপান্তরিত হয়। কাঁদামাখা জলাশয়ে মেঠোপথ, পরবর্তীতে সেই মেঠোপথ মহাসড়কে পরিবর্তিত হয়। আজকের শিশু কালের ব্যবধানে যুবক বুড়ায় পরিণত হবে। পরিবর্তনের এ ধারা আঁচড় বসিয়েছে খোদ প্রকৃতির বুকে। তাই প্রকৃতির মৌসুমকে শীত গ্রীষ্ম-বর্ষা বসন্ত ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চিহ্নিতকরণ।
প্রকৃতির বুকে এই যে পরিবর্তন, এটা বিনা কারণে নই। এর পেছনে নতিজা আছে। উন্নতি বা প্রভাব বিস্তারকরণ। পরিবর্তনের সিলসেলায় আপতিত প্রতিটি বস্তুই নিজের জাগায় প্রভাব বিস্তার করে। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, আলো আধারকে মুছে দেয়। হেমন্ত এসে নিজের প্রভাবে গাছের পাতা ঝরিয়ে ফেলে। বসন্ত আবার গাছের বুকে সজিবতা ফিরিয়ে আনে। বসন্তের প্রভাবে প্রকৃতি নবরুপ ধারণ করে।
মানুষের জীবন প্রকৃতির নিয়মের বাহিরে নই। তাই মানবজীবনেও বিভিন্ন সময় আসে নানান পরিবর্তন। ঘটে হেমন্ত বসন্তের আগমন। পাপ আর অপরাধ মুমিনের জন্য হেমন্তের মত। যা ইমানের সজিবতা কেড়ে নেয়। হেমন্তের এ আক্রমণে মুমিন বান্দা নেতিয়ে পড়ে। প্রকৃতির মত মুমিনের জীবনেও হয় বসন্তের আগমন। বসন্তের সজিবতা নিয়ে আসে পবিত্র রমজান। যার আগমনে ইমান পুরোদমে সজিব হয়ে ওঠে। মুমিনের ইমানকে মজবুত করে দেয়। নতুন করে জাগিয়ে তোলে। পবিত্র রমজান মুমিনের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে বসন্তের মত। মুমিন বদলে যায়। পরিবর্তন আসে মুমিনের আচার আচরণে। চলনে বলনে। মুমিনের জন্য রমজান, যেন ইমানের গায়ে বসন্তের ছোঁয়া।
কিন্তু কথা হচ্ছে আমাদের বাস্তব হালত নিয়ে। আমাদের জীবনে রমজানের কার্যকরী প্রভাব নিয়ে। আমাদের জীবনে রমজানের ছোঁয়া কতটুকু লেগেছে, সেটা নিয়ে। আচ্ছা! রোজার আগমনে আপনার ইমান সবুজ-সতেজ হয়েছে, বিষয়টা কি আপনি অনুভব করতে পারেন? আপনি কি বলতে পারেন, রোজা আপনার মাঝে কতটুকু পরিবর্তন এনেছে? অথবা আপনার পরিবর্তিত অবস্থা কি সময়ের চাহিদা অনুপাতে ঠিক আছে? তা ছাড়া রোজার এ প্রভাব আপনার মাঝে কতখানি স্থায়ী হবে, সেটাও ভাবার বিষয়। ঈদের পরদিনই কি মাথার টুপি খুলে যাবে? সাথে মসজিদের পথটাও ভুলে যাবেন?
মুমিনের জীবনে বসন্তের রুপ নিয়ে আসা পবিত্র এ রমজান বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। এখন পর্যন্ত কি আপনি প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব কষেছেন? নাকি রমজান চলে যাবে আর আপনি থাকবেন আগের মতই অপরিবর্তিত। এখনো সময় আছে। হিসাব করে ফেলুন।
প্রাপ্তির খাতা শূন্য থাকলে সেটা পূরণ করে ফেলুন। উপর্যোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন। উত্তর পজেটিভ হলে স্বার্থক হবে আপনার জীবনে এ বসন্তের আগমন।
লেখক : আলেম, মাদরাসা শিক্ষক ও কলামিস্ট