কিয়ামুল লাইল নামাজ : গুরুত্ব ও ফজিলত
মাওলানা ওমর শাহ
লাইলাতুল কদরের এক গুরুত্বপূর্ণ আমল কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ। আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালা সুরা মুযযাম্মিলে রাসুলুল্লাহ সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাতের ইবাদত প্রবৃত্তি দলনে এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।’ সুরা মুযযাম্মিল: ২
নাশিয়াতাল লাইল-সম্পর্কে আয়েশা রা. বলেন, ‘এর অর্থ রাতের নিদ্রার পরে নামাজের জন্য গাত্রোত্থান করা।’ নবুওতের প্রাথমিক সময়ে রাসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবাদের ওপর তাহাজ্জুদ সালাত ফরজ ছিল। নফল ছিল না।
তাহাজ্জুদের সালাত সম্পর্কে হারিস ইবনে হিশাম রা. আয়েশা রা. কে নবি সা. এর তাহাজ্জুদ সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আয়েশা রা. বলেন, ‘তুমি কি সূরা মুযযাম্মিল পড়নি?’ হারিস ইবনে হিশাম রা. ‘হ্যাঁ পড়েছি।’ আয়েশা রা. বলেন, ‘তাহলে শোন নবুওয়তের প্রাথমিক সময়ে নবি সা. এবং তাঁর সাহাবারা তাহাজ্জুদের সালাত ফরজ হিসেবে আদায় করতেন। এমন কি তাদের পা পর্যন্ত ফুলে যেত। বারো মাস পরে এ সুরার শেষের আয়াতগুলো নাজিল হয় এবং মহান আল্লাহ সহজ করে দেন। তাহাজ্জুদ নামাজকে তিনি ফরজ হিসেবে না রেখে নফল হিসেবে রেখে দেন।’ মুসনাদে আহমদ : সূত্র-তাফসিরে ইবন কাসির
মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পরে তাহাজ্জুদ সালাত ফরজ রহিত হয়ে নফল হিসেবে থেকে যায়। আর এ জন্যই আয়েশা রা. বলেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ভার লাগব করে তাহাজ্জুদ সালাতকে ফরজ রহিত করেন এবং নফল হিসেবে তা রেখে দেন।
নবী সা. এর জন্য তাহাজ্জুদ সালাত ফরজ না নফল ছিল তার উত্তর খোদ কুরআন কারিমেই রয়েছে। এ সম্পর্কে, আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালার বাণী, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করো, এটা তোমার জন্য নফল (অতিরিক্ত) আশা করা যায় তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ সুরা বনি ইসরাইল : ৭৯
রাতের ইবাদত নবি সা. আজীবন আদায় করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালার একজন শোকর-গুজার বান্দা হিসেবে। রাতের কিয়ামে রাসুলুল্লাহ সা. এর পা ফুলে যেত, এমনকি পা ফেটে রস বের হতো। এ দৃশ্য দেখে সাহাবা রা. কেরাম প্রশ্ন করতেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ সা. আপনার তো আগের পেছনের কোনো গুনাহ নেই, তাহলে আপনি কেন এত কষ্ট করছেন?’ রাসুলুল্লাহ সা. এর উত্তর ছিল, ‘আমি কি শোকর-গুজার বান্দা হবো না!’
তাহাজ্জুদ সালাতের মাধ্যমে মানবের নফছ বা পবৃৃত্তি দমন-দলন করা তথা পিষ্ট করা অতিশয় কার্যকর একটি অমোঘ দাওয়াই। তাহাজ্জুদ সালাতের সময় রাতের নিদ্রার পরের সময়। হজরত আয়েশা রা. ইন্না নাশিয়াতাল লাইল সম্পর্কে বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে রাতের নিদ্রার পরে গাত্রোত্থান করা। রাতের প্রথম প্রহরে মানুষ কর্মব্যস্ততার সময় অতিবাহিত করে, এশার নামাজসহ আনুষঙ্গিক আরো বহু ব্যস্ততা রয়েছে কিন্তু রাত দ্বিপ্রহরের পরে রাতের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।
এ সময় গাত্রোত্থান করে ঘুমের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে বান্দা যখন তার রবের নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য রাতের সালাতে দ-ায়মান হয়; তখন স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির এক নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হয়। এ সময় সালাত আদায়কারী তার নফছ বা প্রবৃৃত্তিকে বশীভূত করার মাধ্যমে তার আরামের বিছানা ত্যাগ করতে সক্ষম হয়।