
দুটি বিষয় আড়ালের চেষ্টা বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হতে পারে বাবুলকে
বিপ্লব বিশ্বাস : কার নির্দেশে মিতু খুন হয়েছেন, পুলিশ জেনেও কেন কিছু বলছে না। আবার বাবুল আক্তারকেই বা কেন হয় জেলে নয়তো চাকরি ছাড়ার জন্য বলা হয়েছিল, তার কোনো উত্তর পাচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা- নিয়ে দিন দিন রহস্যের ডানা-পাখা মেলছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকা সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জš§ দিচ্ছে। ৫ জুন হত্যাকা-ের পরপরই এ জন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তে এর কিছুই পায়নি পুলিশ। এরপর খুনিদের ব্যবহƒত মোটরসাইকেলটি চট্টগ্রামে শিবির অধ্যুষিত এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর হত্যাকা-ের সঙ্গে শিবির জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করে পুলিশ। সে সূত্রে হাটহাজারী থেকে গ্রেফতার করা হয় আবু নসর গুন্নু (৪০) নামে মাজারের এক খাদেমকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মাজার কর্তৃপক্ষের জোর প্রতিবাদ এবং মাজারসংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জের ধরে পুলিশকে দিয়ে গুন্নুকে ফাঁসানোর খবর পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখির কারণে পুলিশ সে অবস্থান থেকে সরে আসে। হত্যাকা-ের পর থেকে সিএমপি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে এলেও হঠাৎ করে পুলিশি তদন্তে ভাটা পড়ে। এরই মধ্যে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালালেও মিডিয়াকে কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ থেকে বিরত রাখে। এমনকি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন সিএমপির কর্মকর্তারা। তবে স্বজনরা এখনও বিশ্বাস করছেন, বাবুলের পেশাগত দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত হয়েই মামলা ঘিরে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রেয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি অবৈধ স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় কোনো পক্ষ তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল কি-না, তাও তদন্ত করার কথা বলছেন স্বজনরা।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেছেন, মিতু হত্যাকা-ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা মেলেনি। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলছি না।
এরই মধ্যে এই মামলায় দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও খুনের মোটিভ ও পরিকল্পনাকারী কে, তা জানা যায়নি। পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নিয়েছে। তাহলে এখন কেন হত্যার মোটিভ ও পরিকল্পনাকারীর নাম জানা যাবে না। তাহলে দুটি বিষয় আড়ালের চেষ্টা চলছে। নাকি মিতু হত্যার নেপথ্যে এমন কিছু লুকিয়ে আছে, যা বের হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিব্রত হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াসিম ও আনোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ভোলা ও মনিরকে। অনেক আগেই এদের শনাক্ত করে রেখেছে পুলিশ। অন্যদিকে শোনা গেছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অবশেষে বাবুলকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে। এমনও গুঞ্জন আছে, বাবুল আক্তার বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আর চাকরিতে ফিরছেন না। পুলিশের কেউ কেউ বলছেন, এমন বাস্তবতায় বাবুল আক্তারের আর চাকরিতে না ফেরাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। তাকে নিয়ে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, তাতে আবারও পুলিশ বাহিনীতে বাবুল যোগদান করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বর্তমান সময়ে পুলিশের ভূমিকায় জš§ দিচ্ছে একের পর এক রহস্য ও বিস্ময়।
কিন্তু কেন? তাহলে মিতু হত্যায় কি বাবুল আক্তার জড়িত? যদি তাই হয়, বাবুল আক্তার জেলে যাওয়ার পরিবর্তে চাকরি ছাড়তে রাজি হলেন কেন? আবার পক্ষান্তরে, স্ত্রী-বিয়োগের যন্ত্রণায় শিশুর মতো কান্নার রোলটা কি বাবুল আক্তারের অভিনয় ছিল? এমনকি স্ত্রী হত্যার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে চট্টগ্রাম মহানগর পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিনকে দায়ী করে আক্রমণই বা কেন করেছিলেন? পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে স্ত্রী হত্যার মামলাই বা কেন করেছিলেন বাবুল আক্তার? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নয় পুলিশের কোনো ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মিতু হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর গত শনিবার ওয়াসিম ও আনোয়ারের সঙ্গে কামরুল সিকদার ওরফে মুছা, ভোলা, মনির, শিহাব ও নবী নামে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তিতে ভোলা ও মনিরের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বাকিদের নাম পরবর্তী কিস্তিতে প্রকাশ করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এ কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, মিতু হত্যাকা- মূলত মুছার নেতৃত্বে হয়েছে। হত্যাকা-ে অংশ নেয় সাত-আটজন। তাদের ভাড়া করে মুছা। তবে মুছার সঙ্গে মূল হত্যা পরিকল্পনাকারীর যোগসাজশ রয়েছে, যার নাম-ঠিকানা ও পরিচয় পাওয়া গেছে। তাহলে এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে কে সেটা পুলিশ জেনেও কেন তা বলছে না জানতে চাইলে কোনো জবাব মেলেনি। বরং বলেন, এ জন্য আরও কত সময় অপেক্ষা করতে হবে তা আমিও বলতে পারব না।
কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, এই স্তরের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা কোনো কারণ ছাড়া ঘটতে পারে না। শুধু তাই নয়, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন অনেক পুলিশ কর্মকর্তার। নগরীর ওসি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্যারের বাসায় দুজন কনস্টেবল নিয়মিত পাহারায় থাকার কথা। হত্যাকা-ের দিন তারা কোথায় ছিল? স্যারই বা একজন ওসিকে এ জন্য দায়ী কেন করলেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম
