আজাদ হোসেন সুমন : গত ৬ মাসে ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব ও পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ৬২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৭ জনের মৃত্যুতে পুলিশ জড়িত। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বা ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনাগুলো নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন ক্রস ফায়ারের যারা কট্টর সমালোচক তারাও বাস্তব পরিস্থিতির স্বীকার হলে ক্রসফায়ারের ব্যাপারে নীরব থাকেন। মানবাধিকার সংগঠন ‘আসক’ কর্তৃক গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের প্রথম ৬ মাসে ৬২ জনের মধ্যে ৩৭ জন পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ২৪ জন র্যাবের ক্রসফায়ারে এবং একজন বিজিবির ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। তাতে আরও বলা হয়, বিচার-বহির্ভূত এই হত্যাকান্ড নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে কয়েকজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানামহল থেকে। আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে সাদা পোশাকে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫০ জনকে তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়জনের লাশ পরে পাওয়া যায়, দুজন ফেরত এসেছে, চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকিদের কোনো খবর মিলেনি। আসকের হিসাব অনুযায়ী, ছয় মাসে সীমান্তে ভারতীয়বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১২ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৮ জন, যাদের মধ্যে ১৭ জন ফেরত এসেছে বিজিবির মধ্যস্থতায়। আসকের প্রতিবেদনে শিশু নির্যাতন ও হত্যা, রাজনৈতিক সংঘাত, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক হয়রানি, সীমান্ত সংঘাত, কারা হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ের সংখ্যাগত হিসাবও দেওয়া হয়েছে।
এই সময়ে ৫৯১টি শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ২৩৫ জন শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে এবং ১৫ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও গত ছয় মাসে ৭৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ক্রসফায়ার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মানবাধিকবার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিচার বহির্ভূত কোনো হত্যাকান্ডই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সন্ত্রাসী বলা উচিৎ নয়’। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি