ইমরুল শাহেদ : ইউরোপের সামরিক শক্তি হিসেবে ন্যাটো থাকলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী গঠন করার কথা ভাবছে। ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ব্রিটিশরা ভোট দেওয়ার একদিন পর ইইউ পার্লামেন্ট কমিটি এ বিষয়টি জানান দেয়। এই কমিটির পররাষ্ট্র বিভাগ স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী গঠনের কথা জানান দিয়ে বলেছে, ‘ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র বলেছেন, ফ্রাংকো-জার্মান সেনাবাহিনীর আদলে এই সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হবে। এতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি আরও বেশি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রয়োজন একটি কমন সামরিক হেডকোয়ার্টার্স এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইইউ চুক্তির স্থায়ী কাঠামো অনুসারে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করা উচিত। এই ধরনের একটি জোটের স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী থাকতেই পারে।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, পশ্চিম ইউরোপের রক্ষা কবচ হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে গঠন করেছিলেন ন্যাটো। এর নেতৃত্বে থাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা আজো নেতৃত্বে আছে। এর বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপকে নিয়ে ১৯৫৫ সালের মে মাসে সম্পন্ন করে ওয়ারশ’ প্যাক্ট। কিন্তু গোল বাধে রুশ ফেডারেশন ভেঙে যাওয়ার পর। ওয়ারশ’ প্যাক্ট আর অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি। এই সুযোগে ন্যাটো প্রসারিত হয় পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত। ন্যাটো এখন সামরিক শক্তি হিসেবে প্রবেশ করেছে এশিয়াতেও। আফগানিস্তানে তাদের ছোটখাট একটি ঘাঁটিও রয়েছে। এখন রাশিয়াও ন্যাটোর সদস্য। কিন্তু ইউরোপের লক্ষ্য হলো তাদের সেনাবাহিনীকে তারাই নেতৃত্ব দেবেন। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিনিধি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেডেরিকা মোগেরিনি আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবাবলি ইইউ নেতাদের কাছে হস্তান্তর করবেন। ২০০৩ সাল থেকে ইউরোপিয়ান সিকিউরিটি স্ট্রাটেজির যে বিষয়টি কার্যকর আছে, গঠিত সেনাবাহিনী তারই স্থলাভিষিক্ত হবে।
ফেডেরিকা মোগেরিনি ব্রিটেনের ডেইলি এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘ন্যাটো শুধু বিদেশি হামলার হাত থেকে ইউরোপে তাদের সদস্য দেশগুলোকে রক্ষা করবে। কিন্তু অবশিষ্ট ইউরোপেরও সমান সক্ষমতা থাকতে হবে যাতে তারাও সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারিত্বের জন্য আরও বেশি কার্যকর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শক্তি প্রয়োজন।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়টি নিয়ে ইইউ নেতারা নিয়মিতই কথা বলে চলেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে নাৎসী হামলার ৭০তম বার্ষিকীতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, জার্মানির উচিত এখন ক্রমশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো। তিনি বলেছেন, বিদেশি হামলা থেকে ইইউ দেশগুলোর রক্ষা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারিত্বের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম