হায়দারাবাদে ‘আইএস-এর তৎপরতা’ মন্দিরে গরুর মাংস ছড়িয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির পরিকল্পনা ফাঁস!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আইএসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে হায়দারাবাদে আটক ১১ জঙ্গি ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। এজন্য ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দিরে গরু ও মহিষের মাংস ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা। জনাকীর্ণ স্থান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর বোমা হামলার পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন ওই জঙ্গিরা। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-এর দাবির বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এই খবর জানিয়েছে।
এনআইএ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, হায়দারাবাদের ওই আইএস জঙ্গিরা পবিত্র রমজান মাসকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছিল সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির কাজে। এজন্য তারা মন্দিরে গরুর মাংস ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এনআইএর দাবি, আটককৃত জঙ্গিরা শফি আরমার নামের একজন আইএস নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন যিনি গত ৪-৫ হলো তাদের নজরে ছিলেন। ওই ব্যক্তি ভারত থেকে আইএস জঙ্গি নিয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত বলে দাবি করে এনআইএ।
২৫ জুন তারিখের একটি টেলিফোন সংলাপ থেকে জঙ্গিদের পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এনআইএ। এনআইএ সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি টেলিফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে ঐদিন ৪ টুকরো গরুর এবং ৪ টুকরো মহিষের মাংস নিয়ে আসতে বলেন। পরবর্তী দিনে আরও ৭ টুকরো গরুর মাংস আনতে বলেন তিনি। হামলাটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পন্ন করার পরিকল্পনা ছিল। এর অর্থ আসছিল দুবাইয়ের মাধ্যমে।
পরিকল্পনার কথা জেনেই তৎপর হয় এনআইএ। হায়দারাবাদের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ১১ জঙ্গিকে আটক করেছে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী দল (আইএনএ)। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবরটি নিশ্চিত করে। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে ১৩ জন আটকের কথা বলা হয়। তারা জানায়, আটককৃতদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। এদিকে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ দাবি করে, আইএসের সরাসরি নির্দেশে কাজ করতো আটককৃতরা।
বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ইয়াজদানি, মোহাম্মদ ইলিয়াস ইয়াসদানি, আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ আল আমুদি, হাবিব মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদ ইরফানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি ৬জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আটককৃতদের সবার বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। এরা সবাই সচ্ছ্বল পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে কেউ কেউ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারও।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর মাংস ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা জানার পরই তৎপর হয় এনআইএ। ‘টেলিফোনের সংলাপ থেকেই আমরা সচেতন হয়ে উঠি। আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, আটটকৃত তরুণরা আমির নামে পরিচিত সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি নিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।’ ওই কথিত ‘আমির’কে শাফি আমির ওরফে ইউসুফ আল হিন্দি হিসেবে সন্দেহ করছে এনআইএ।
তাদের দাবি, শপিং মলসহ বিভিন্ন জনাকীর্ণ এলাকায় হামলা এবং চারমিনারের মন্দিরে মন্দিরে গুরুর মাংস ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্ভাব্য একটি হামলাস্থল ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দির বলেও জানায় এনআইএ।
এরআগে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বুধবার জানায়, বুধবার ভারতে আইএসের কয়েকটি শাখার জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে এমন খবরের ভিত্তিতে আইএনএর গোয়েন্দারা তল্লাশি অভিযান শুরু করেন। অভিযানের ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোর ৫টার দিকে ১৩ জনকে আটক করা হয়। উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক এবং নগদ ১৫ লাখ টাকা। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ