অস্থির কৈশোর, বিপণœ ভবিষ্যৎ
তাসলিমা আক্তার
কৈশোরকাল মানুষের জীবনের কঠিন একটা সময় এতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের ভীতটা গড়ে ওঠে কৈশোরেই। আজকাল কিছু কিছু ঘটনায় শেকড়শুদ্ধ কেঁপে উঠছি। সুবর্ণ কৈশোর সময়টিতে গ্রহণ লেগেছে। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বয়ে আনছে অশনি সংকেত।
ঐশী এখন আমাদের কাছে একটা দুঃখের নাম। সেই মেয়েটির কথা বলছি, যে তার কোমল হাতদুটো রাঙা করেছিল স্বীয় বাবা-মায়ের রক্তে। ইয়াবার মরণ নেশায় বুঁদ হয়ে বিসর্জন দিয়েছিল বিবেকবোধ। মতভেদ থাকতে পারে তার কৃতকর্ম নিয়ে। কিন্তু অস্বীকার কিভাবে করি, ঐশী আসলে এই সমাজেরই শিকার। শুধু অঢেল বৈভব দিয়ে সন্তান মানুষ করার অলীক স্বপ্ন যারা দেখেন, সেইসব বাবা-মায়ের জন্য ঐশী একটি করুণ উদাহরণ।
বছর দুয়েক আগে আরেকবার ঝাঁকিয়ে দিয়ে গিয়েছিল একটি সংবাদ। উত্তরায় কিশোর বয়সী মুনমুন এবং আলিম নামের দুই ভাই-বোন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল। হতভাগ্য এই দুটি শিশু ছিল নেশাসক্ত। অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শি একটা সুইসাইড নোট রেখে গিয়েছিল আমাদের জন্য। শিশু দুটির বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর তাদের বাবা নতুন বিয়ে করে পাড়ি জমিয়েছিলেন কানাডায়। আর একা মা অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন জীবিকার প্রয়োজনে। অসহায় দুই ভাই-বোন অনাদর আর অবহেলার জীবনে গ্রহণ নেশার দংশন। খুব অল্প সময়েই বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ হারায় তারা। আত্মহননের মধ্য দিয়ে জ্বালা জুড়ায় সকল দহনের।
অল্প কিছুদিন আগে হবে আরেকটি ঘটনা। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা কিন্তু পরিবারটি আদিসূত্রে বাংলাদেশি। বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে থাকত দুটি ভাই হাসিব ও রাব্বি। ওরা ঠিক কৈশোরে ছিল না। বড় ভাইটি পরিণত বয়সের। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কি এক আক্রোশে পুনঃপুনঃ গুলি করে হত্যা করে বাবা-মাকে।
আজ সময়ের প্রয়োজনেই আধুনিক পরিবার গড়ে উঠেছে। ভালো-মন্দ দুটোই আছে ছোট পরিবারের মধ্যে। জীবিকার প্রয়োজনে বাবা-মা দুজনেই বহির্মুখি। পারিবারিক ভাঙনের সংখ্যাও বাড়ছে। ইন্টারনেট নির্ভর বিনোদন এখন আমাদের সন্তানদের। খেলাধুলার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। একাকী কিশোর আক্রান্ত হচ্ছে মনোবৈকল্যে। অস্থির সময় কাটাচ্ছে কোনো অসৎ সঙ্গে। নেশার কাছে খুঁজছে আশ্রয়।
কিন্তু বাবা-মা-ই অনেকাংশে পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। নৈতিক শিক্ষার চর্চাটা গড়ে উঠতে পারে পরিবার থেকেই। পাশাপাশি সমাজ রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব হলো কিশোরের বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের জীবনের সুখের অনেকটা অংশই ঘিরে থাকে সন্তানকে কেন্দ্র করে। কিশোর বয়সী সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে বাবা-মা। স্পর্শের চেয়ে মহৌষধ আর নেই। একটু সময় করে কাছে টেনে বাবা-মার বুকের গন্ধ নিতে দিন আপনার সন্তানকে। অনেক সমস্যা মিটিয়ে দিয়ে দুটি মিষ্টি কথা। আদর আর ভালোবাসার আর কোনো দোসর কোনো কালেই ছিল না।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন