ঐশী ফাঁসির কাষ্ঠে, বদি সৎ ব্যবসায়ী!
ড. বদরুল হাসান কচি
ঐশী রহমান এবং আব্দুর রহমান বদি, নাম দুটি অনেকদিন ধরেই আলোচিত। ঐশী সবে স্কুল শিক্ষার্থী আর বদি সংসদ সদস্য। বাড়তি পরিচয় হলোÑ ঐশী মাদকে নিয়মিত আসক্ত ছিলেন, আরেকজন মাদক ব্যবসার হোতা হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তাছাড়া বদি সাহেব দেশে ইয়াবার প্রধান রুট কক্সবাজার আসনের এমপি।
সকলের জানা কথা তারপরও বলছি, সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম আজ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মাদকে। প্রথমে কৌতূহলে, তারপর এখানেই সুখ খোঁজে, এরপর আসক্তি। ফলাফল আজকের ঐশী। কি অবিশ্বাস্য সন্তানের হাতে খুন হলেন বাবা মা। মূলে যে হেতু সেটা হচ্ছে মাদক। প্রিয় বাবা মাকে হত্যা করে সে নিজেও ফাঁসির সাজায় কারাগারে। এভাবে ঐশীর মতো খুব নীরবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে কতো জীবন, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পরিবার, অশ্রুতে বিলীন হচ্ছে মায়া, মমতা আর আনন্দ এবং বিষাদে ভরে উঠছে খুব প্রিয় সম্পর্কগুলো।
অভিভাবকেরা আজ শঙ্কিত। একজন অভিভাবক হিসেবে সিনিয়র সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার একটি লেখায় এভাবেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘সব শিশুই আমার কাছে দেবশিশু। সব শিশুই আমার কাছে আমার সন্তানের মতো। কারণ সব শিশুই পৃথিবীতে আসে নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ দেবশিশু হিসেবে। তারপর বড়দের, মানে আমাদের ভ-ামি, কূপম-ূকতা, হিংসা, লোভ, লালসা বদলে দেয় তাদের পৃথিবী। আস্তে আস্তে সভ্যতার অন্ধকার দিকগুলো গ্রাস করে তাদেরও। তারা হতাশ হয়, কষ্ট পায়, বেদনায় নীল হয়, কেউ কেউ নিজে মরে যায়, কেউ কেউ বাবা-মাকে মেরে ফেলে।’
অথচ যারা নীরবে ঐশীদের হাতে মাদকের মতো জীবনধ্বংসী অস্ত্র তুলে দেয়, তারা সমাজে সম্মানিত যাক সৎ ব্যবসার নতুন করে সংজ্ঞা পেয়েছি আমরা। এই সংজ্ঞা যদি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়ে যায় তাতেও জনগণ আমরা খুব একটা অবাক হব না।
ঐশীর বিচারের রায় ঘোষণা হবার পর ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকায় থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার এক স্ট্যাটাসে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত মনে ইয়াবা অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরেছেন। এই অর্থনীতি কিভাবে ঐশীদের খুনি হতে সহায়ক ভূমিকা রাখেন সেটাই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি লিখেন, ‘ইয়াবা অর্থনীতি বুঝতে হলে আপনাকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফ যেতে হবে। যে লোকটি কিছুদিন আগেও খেতমজুর হিসেবে কাজ করত আজ তার দোতলা দালান বাড়ি। এরকম নিম্নবিত্তের মানুষ হঠাৎ করে বিত্তবান হয়ে উঠার মানে বোঝা যায় কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিত্তবানরা ইয়াবা অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত নন। বরং বিত্তবানরা এই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক।’ এখানে উল্লেখ করা দরকার এই আইনজীবীর বাড়ি কক্সবাজারে। তাই হয়তো তিনি ইয়াবা অর্থনীতির চিত্রটি এতো সরলীকরণ করে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের উৎসাহের ফলে ঐশীরা আজ মাদকসেবী, কখনও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অন্যদেরও অপরাধে উৎসাহিত করছে, ক্ষেত্র বিশেষে খুনও করছে। বিষয়টি খুব পরিষ্কার, শুধুমাত্র ঐশীদের অপরাধের শাস্তি দিলেই সমাজে এমন অপরাধের লাগাম টেনে ধরা যাবে না; যদি না মাদক নিয়ন্ত্রণকারীদের বিচারের আওতায় আনা যায়। তাই বলছি, মাদক ব্যবসায়ীদের বছর বছর শীর্ষ করদাতা পদকে ভূষিত না করে বিচারের আওতায় আনলেই বরং দেশের মঙ্গল।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন