মহানগর আওয়ামী লীগের পর্যাপ্ত রাজনৈতিক কার্যালয় নেই কেন?
রবিউল আলম
স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। এই সংগঠনটি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তার অবস্থান। কেননা, সংগঠনটির দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্জন-বিসর্জনের ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী, মৌলিকভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগ মাঝে মধ্যেই খেই হারায়। বিশেষ করে সাংগঠনিক তৎপরতায় কর্মী-সমর্থকদের বিপুল আগ্রহ, উদ্দীপনা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না পর্যাপ্ত রাজনৈতিক অফিস স্বল্পতায়। বিশেষত ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে তার প্রভাব অনেক বেশি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো গঠনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। জনস্বার্থের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকার রাজপথ দখলে কর্মকৌশলে সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। একসময় মুসলিম লীগের ব্যাপক প্রভাব ছিল ঢাকার রাজনীতিতে। মাজেদ সরদার, নবাব সলিমুল্লাহ, খাজা পরিবারের প্রভাবের কাছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছিল একরকম অসহায়। সেসময় এখানে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল করাও কঠিন ছিল। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগকে দুরদশাগ্রস্ত থেকে উদ্ধারে বঙ্গবন্ধু কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক কৌশল প্রতিষ্ঠায় সেসময় বঙ্গবন্ধু বেছে নেনÑ হাফেজ মুসা, কালু শেখ, রফিক শেখ মুসলিম লীগকে মোকাবেলায় জনসমর্থন গঠনে সফলতা লাভ করেন। ঢাকার মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি হাফেজ মুসা। এর বাইরেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেনÑ গাজী গোলাম মোস্তফা, মোজাফফর হোসেন পল্টু, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, এম.এ. আজিজ।
যেহেতু দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম, উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢাকাকে কেন্দ্র করেই হয়, তাই ঢাকার রাজনীতিটাও থাকতে হয় অত্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তির ওপর। নগরবাসীর রাজনৈতিক সুবিধা ও উন্নয়নের পরিকল্পনার সুফল সুবিধা পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। নানা আলোচনা-সমালোচনা বাঁধাকে ডিঙিয়ে মহানগরের দায়িত্ব দুজনের কাছে অর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সেই সাহসী সিদ্ধান্তের, পদক্ষেপের সুফল ইতোমধ্যে আমরা পেতে শুরু করেছি। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওতায় মহানগরের নাগরিকদের জন্য কাজ করছেন দুই মেয়র। জনগণ উন্নয়ন পরিকল্পনার সুবিধা পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য আশার কথা। আনন্দের কথা।
যে জায়গায় আমাদের মনোযোগ বেশি, সেই রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জন্য কি ঢাকা প্রস্তুত? বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগ। আমরা এখন যেমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আছি, বসবাস করছি, স্থিতিশীলতা রয়েছে রাজনীতিতে। এটা তো সবসময় থাকে না। কে না জানি, ২০১৩ সালের শেষের দিকে দেশে সহিংসতা কেমন ধারণ করেছিল, বিএনপির কারণে। মনে আছে নিশ্চয়ই। ২০১৫ সালের টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালের কথা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাইনি। ঢাকা তখন কার্যত ছিল সহিংসতার পিঠস্থান! পেট্রলবোমা, আগুন সন্ত্রাসে মানুষ জ্বলেছে, পুড়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এই আগুন সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি থেকে মহানগর নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য, আগুন সন্ত্রাসকে প্রতিরোধ করার প্রয়াসে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেটি অপূর্ণাঙ্গ ছিল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্বিত হওয়ায় থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না।
এখানে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়েই যেহেতু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়, তাদের একত্রিত হওয়ার, আলাপ-আলোচনা মিটিংয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে রাজনৈতিক কার্যালয়। মহানগর আওয়ামী লীগে উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন কার্যত কোনো কার্যালয় নেই। তার ফলে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ, তদারকি করা যাচ্ছে না ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। গতানুগতিকভাবে চলছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম। এটা একটা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য মোটেও ভালো সংবাদ নয়। এমন করে কতদিন চলবে জানি না। তবে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যে জরুরি। এজন্য উত্তর সিটি করপোরেশন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় থাকা খুব প্রয়োজন। জরুরি। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. সাদেক খান সাংগঠনিকভাবে যতই দক্ষ হোন না কেন, সাংগঠনিক কাজে স্বাধীনতা ছাড়া প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অফিস, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও ইউনিট সাজানো অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। সময় এখন অনেক কম, সামনেই জাতীয় নির্বাচন, যা আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এমতাবস্থায় মহানগর আওয়ামী লীগের যেসব সংকট রয়েছে, তা নিরসনে নেতৃবৃন্দ সক্রিয় হবেন কি? বিবেচনায় নিবেন কি?
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন