রংপুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাদুকা শিল্পীরা
রংপুর প্রতিনিধি : তখন সকাল সাড়ে এগারটা বাজে। বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। কারখানায় বসে আনমনে সিলভার আইটেম(বার্মিজ) জুতা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন পাদুকা শিল্পীরা। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। ভালোভাবে ঈদ করার জন্যই তাদের শ্রম আরও বাড়িয়েছেন। এখানে নগরীর রিয়াজ কারখানার পাদুকা শিল্পীদের ব্যস্থতার কথা বলা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীতে ছোট-বড় ২০টি পাদুকা কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় দিনে রাতে ১২০জন শিল্পী কাজ করে যাচ্ছেন। তারা সোল তৈরি, সেটিংকরা, জুতা সেলাই, ফিটিং এবং রং শেষে ফিনিশিংয়ের কাজ করেন। এছাড়া কাঠ দিয়ে মেশিনে সোল বানিয়ে থাকেন। কয়েক প্রকাররের পাদুকা তৈরি হয় কারখানাগুলোতে। একেকটি কারখানায় দিনে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার জুতা তৈরী হচ্ছে। গুনগতমান ঠিক রেখে কারখানায় ১শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকার জুতা তৈরি করেন। ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি দামের জুতা তৈরি হয়। রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের লালমনির হাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, নীলফামারী এবং ঠাঁকুরগাঁও জেলার বিভিন্নস্থানে এ জুতা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া, প্রেসক্লাবের সামনে বাটারগলি, মাহিগঞ্জ এবং জুম্মাúাড়াসহ অন্যান্যস্থানে এসব কারখানা গড়ে উঠেছে। এই কারখানাগুলোর উপর নির্ভর করে করে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের জীবন জীবিকা চলছে। রিয়াজ কারখানার পাদুকা শিল্পী এনামুল হক জানান, তিনি প্রতিদিন ৮/১০ ডজন জুতা তৈরী করেন। দিনে ৬শত টাকারও বেশি আয় হয় তার।
তবে ঈদের সময় তাদের আয় আরও বেড়ে গেছে।
শিল্পী আলী মোহাম্মদ বলেন,ভারতীয় নিম্নমানের জুতায় রংপুরের বাজার সয়লাব। মানুষ না বুঝে শুধুই কিনছে ভারতীয় জুতা। এসব জুতার চেয়ে আমাদের তৈরি জুতা অনেক ভালো। সরকার ভারতীয় জুতা বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিলে রংপুর তথা সারা দেশে দেশীয় জুতার চাহিদা বেড়ে যেত। বৃদ্ধি পেত কারখানার সংখ্যাও।
আরেক পাদুকা শিল্পী জাফর আলী বলেন, এ কাজ তেমন কঠিন না। যার কারণে কারখানার বাইরে অনেক রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনও নিজেরাই জুতা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। তিনি বলেন, নগরীর প্রায় ৫০ জন রবিদাস জুতা তৈরিতে পারদর্শী। তারা ছিঁড়া জুতা সেলাইয়ের ফাঁকে নতুন জুতাও তৈরি করে বিক্রি করছেন।
স্টেশন এলাকার রবিদাস সুশীল বলেন,তিনি ৫ বছর ধরে মুচির কাজের পাশাপাশি জুতাও তৈরি করে বিক্রি করে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই নতুন নতুন অর্ডার পেয়ে থাকেন।
এদিকে পাদুকা কারখানার মালিকরা বলেন, এইসব কারখানাকে কেন্দ্র করে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সরকার এর দিকে নজর দিলে রংপুরে এসব কারখানার আরও প্রসার ঘটবে। এতে আরও লোকের কর্মসংস্থান হবে।