ডেমরায় জল, বিদ্যুৎ ও যানজটে দুর্ভোগে নাগরিক
মাহবুব মনি, ডেমরা : ডেমরায় জলজট, বিদ্যুৎজট ও যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামগঞ্জের মানুষ রাজধানীর ডেমরার বাসিন্দাদের ‘সুবিধাভোগী ভাগ্যবান’ মনে করলেও এখানকার নাগরিক দুর্ভোগ চরমে। ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হয় দুর্ভোগে। জলজট, বিদ্যুৎজট, যানজট, ময়লা-আবর্জনা, খানাখন্দ দুর্বিসহ করে তুলেছে ডেমরার মানুষের জীবন। দুর্ভোগই যেন নিয়তি হয়ে গেছে এখানে। সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদ্যুৎ, যানজট ও জলজটের।
সপ্তাহে দু’একদিন বিদ্যুতের লোকেরা এলাকায় দিনক্ষণ নির্ধারণ করে ঘোষণায় জানিয়ে দেন সারাদিন বিদ্যুৎ থাকবে না। তাদের বলা তারা বলে যান, কিন্তু নাগরিক দুর্ভোগের খবর নেয়না তারা। এছাড়া রমজানের শুরু থেকেই বিরামহীন লোডশেডিং। এখন এলাকাবাসী বলেন না বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখন বলেন, দিনের ওমুক সময় বিদ্যুৎ এসেছিল।
এদিকে গত ৩ মাসন যাবৎ ডেমরায় ওয়াশার আওতাভুক্ত গ্রাহকরা একেবারেই পানি পাচ্ছে না। বাশেরপুল ওয়াশা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকার কারণে রিজার্ভ পানিও সরবরাহ শেষ হয়ে যায়। পানি পুনরায় সরবরাহ সম্ভব হয় না। পরে বিদ্যুৎ আসলেও লোডশেডিংয়ের কারণে ফুল ট্যাংকি পূরণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে পুরো ডেমরায় পানির সমস্যায় পড়তে হয়।
এ বিষয়ে পাওয়ার ডিস্ট্রিভিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ডেমরা জোনের প্রকৌশলী মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের কি করার আছে ? চাহিদার চেয়ে অর্ধেক বিদ্যুৎ পাই। যতটুকু পাই তাই সরবরাহ করি। এদিকে প্রধান সড়ক থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি রাস্তারই বেহালদশা। এমনকি অনেক রাস্তার কাজ অর্ধেক করেই শেষ। পাশাপাশি খানাখন্দে ভরপুর ডেমরার পথঘাট। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই ডেমরায় শুরু হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। বর্ষণের ফলে ডেমরার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। আর এ জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ ক্রমশই প্রকট হচ্ছে। মানুষের বসবাসের বাড়ি ঘরে পর্যন্ত পানি ঢুকে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করায় কিছু কিছু কিন্ডার গার্টেন স্কুলে জরুরি ছুটি ঘোষণা করতে হয়। তারপরও কোনো উদ্যোগ নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোর।
এখানে অধিবাসীদের জীবনকে আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে ট্রাফিক পুলিশ কর্র্তৃক সৃষ্ট নিত্যদিনের যানজট। সমস্যাটি দীর্ঘদিনের হলেও এই অবস্থা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। প্রলম্ভিত হচ্ছে জনদূর্ভোগ। এদিকে সরকার দলীয়দের রাস্তার পাশে অবৈধ দখলের জন্য রাস্তা সংকুচিত, ফুটপাত দখল, রাস্তার উপর বাজার স্থাপন ও যানবাহন স্টেশন এবং অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাসহ নানা কারণে ডেমরায় যানজটের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। ছুটির দিন এবং গভীর রাতেও এই দুর্বিষহ জীবন থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ডেমরায় অতিরিক্ত মশার উপদ্রবে চরম বিপাকে পড়েছেন পরীক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী।
পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে গভির রাত পযন্ত লোডশেডিং থাকায় এবং অতিরিক্ত মশার উপদ্রবে তাদের ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক লেখা পড়া করতে পারছে না। এদিকে মশার আক্রমণে শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সবারই অবস্থা শোচনীয়। এলাকায় ডোবা-নালা বেশি থাকায় এমনকি যত্রতত্র এলাকাবাসীর ফেলে রাখা ময়লা আবর্জনার কারণে মারাত্মকভাবে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার কামড়ে শিশু-বৃদ্ধদের শরীরে বিভিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা গেছে, মশার কামড়ে নবজাতক শিশুদের শরীরের বিভিন্ন অংশ শক্ত হয়ে ফুলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রমও এখানে লেজে-গোবর অবস্থা।
মশা নিধনের বিষয়ে সারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, যদিও সিটি করপোরেশ গত ৩/৪ বছর যাবত মশক নিধন ওষুধ ছিটানো বন্ধ রেখেছে। তারপরও শিগগিইর মশা নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বেওয়ারিশ পাগলা কুকুর আতঙ্কে ভুগছেন এলাকাবাসী। কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিপূর্বে অনেককেই কামড়েছে বিভিন্নএলাকার বেওয়ারিশ কুকুর। রাজধানীসহ ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে কোথাও মশক ও কুকুর নিধন কার্যক্রমের দেখা মেলেনি। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ডেমরার প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলির রাস্তাঘাটের করুণ দশা। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে পূর্ণ রাস্তাঘাট এখন ডেমরার অন্যতম সমস্যা। পাশাপশি পরিবহন সমস্যাও রয়েছে ডেমরায়। এভাবে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ডেমরাবাসীরা।