২৪ জুন বাবুলের মুখোমুখি মুসাসহ তিন সহযোগী গুম!
বিপ্লব বিশ্বাস : মিতু হত্যায় এ মহুর্তে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হচ্ছে সোর্স মুসা শিকদার। খুনের হুকুমদাতাকে শনাক্ত করতে হলে তাকে নাগালে পাওয়া দরকার। অথচ গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মুসার কোনো হদিস মেলেনি। হদিস পাওয়া যায়নি কিলার রাশেদ, নবী ও কালু নামে মুসার তিন সহযোগীরও। সোর্স মুসা ও তার তিন সহযোগী জীবিত না মৃত সে সম্পর্কে পুলিশ স্পষ্ট করে কোনো কথা বলছে না। মিতু হত্যারহস্য উদঘাটন করতে হলে প্রধান কিলার মুসা শিকদারকে দরকার। কিন্তু তাকে না পাওয়ায় মিতু হত্যারহস্য উদঘাটন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কার্যত আড়ালেই থেকে যাচ্ছে মিতুকে খুনের নির্দেশদাতা।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, মুসাসহ সন্দেহভাজন ৫ জন কিলারকে ধরতে তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন। তারা হচ্ছেÑ প্রধান আসামি মুসা, নবী, শাহজাহান, কালু ও রাশেদ। এদের মধ্যে শাহজাহান গতকাল ধরা পড়েছে। বাকিদের ধরার জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় ছবিসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত এদের কোনো হদিস মেলেনি।
পুলিশের তরফে মুসাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। এমনকি তার সঙ্গে থাকা আরও ৩ জনের ব্যাপারে পুলিশ বলেছে, কেউ তাদের হেফাজতে নেই। তবে মুসা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে বলে তার পরিবার থেকেই দাবি করা হয়েছে। মুসার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেছেন, তার ভাই মুসাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে একদল লোক তুলে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে মুসার স্ত্রী পান্না শিকদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুলিশ মুসাকে তার সামনেই গ্রেফতার করেছে। তার আটক হওয়ার বিবরণ দিয়ে পান্না শিকদার বলেন, মুসার বন্ধু নবীকে গ্রেফতার করে তার স্বামীর হদিস বের করে পুলিশ। পরে শহরের কাঠগড় এলাকা থেকে মুসাকে আটক করে পুলিশ।
আদৌ মুসাসহ ৪ জন আসামির সবার হদিস পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে। গোপন সূত্রে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, প্রধান কিলার মুসাসহ ৪ জনকে হেফাজতে নিয়েই ইতোমধ্যে গুম করে ফেলা হয়েছে। আর কোনোদিন এদের হদিস নাও পাওয়া যেতে পারে। বন্দরনগরীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২২ জুন রাতে মুসাকে বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম আটক করেন। প্রথমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের রানীরহাটে মুসার গ্রামের বাড়িতে হানা দিয়ে আটক করা হয় তার ভাই সাইদুলসহ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুসার বন্ধু নবীকে আটক করা হয়। পরে নবীর মাধ্যমে আটক করা হয় সোর্স মুসাকে। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাটে যে বাড়িটিতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির মালিক আনিস জানিয়েছেন, তার বাড়ির ভাড়াটে মুসার বাড়িটি গত ১৩ জুন থেকে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়েছেন তিনি।
প্রধান আসামি মুসার পারিবারিক সূত্রগুলো দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মুসাকে তুলে নেওয়া হয়েছে গত ১২ জুন। এরপর থেকে তার হদিস মিলছে না। মুসাকে গুম করা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার গণমাধ্যমকে বলেছেন, মুসাকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে গ্রেফতারই করা হয়নি। যদি মুসার মৃতদেহ পাওয়া যেত তাহলে মামলার একটা গতি হতো বলে দাবি করেন কমিশনার।
বন্দরনগরীর একাধিক পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ জুন মুসা ও তার তিনজন সহযোগীকে নিয়ে ঢাকায় যায় চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিনই সোর্স মুসা ও তার সহযোগীদের এসপি বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করানো হয়। ঢাকা থেকে সহযোগীদের ফিরিয়ে আনা হলেও মুসাকে ঢাকায় রেখে দেওয়া হয়। পরে তাকে গুম করে ফেলা হয়। চট্টগ্রামে আনার পর বাকি তিনজন সহযোগীও মুসার মতো ভাগ্যবরণ করে। তাদেরও গুম করে ফেলা হয়। মুসাও তার তিন সহযোগীকে জীবিত রাখলে ভবিষ্যতে মিতু হত্যার আসল রহস্য প্রকাশ পেয়ে যেতে পারেÑ এমন আশঙ্কা থেকে তাদের গুম করে ফেলা হয়েছে বলে সূত্রগুলো অভিযোগ করছে। এসব ঘটনায় মিতু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন কঠিন হয়ে পড়েছে। হুকুমের আসামিকে হত্যার দায় থেকে রক্ষা করার জন্যই মুসা ও তার তিন সহযোগীকে গুম করে ফেলা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সম্ভাব্য কেলেঙ্কারির দায় এড়াতে ও বাহিনীর ভাবমূর্তির স্বার্থে প্রধান আসামিদের আইনের আওতায় না আনার জন্যই এমন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বন্দরনগরীর সূত্রগুলো মনে করছে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম