হাতি যখন কাদায় চামচিকা তখন ঈদে
প্রভাষ আমিন
কথায় কথায় আমরা বলি, হাতি কাদায় পড়লে চামচিকাও নাকি লাথি মারে। কিন্তু বাস্তবে হাতি কাদায় পড়েছে, এমন কথা কখনও শুনিনি, দেখার তো প্রশ্নই উঠে না। আজ পত্রিকায় তেমন একটি খবর পড়ে চমকে গেলাম। ভারত থেকে বানের পানিতে ভেসে আসা একটা বুনোহাতি তিনদিন ধরে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের চিলমারির খেরুয়ার চরে কাদায় আটকে আছে। আমি মানুষটা ভালো নই। নইলে এই নিউজটা পড়ার পর প্রথমেই আমার কিছু চামচিকা ধরে কুড়িগ্রাম যাওয়ার কথা মনে হয়! এমন সুবর্ণ সুযোগ থেকে চামচিকাদের বঞ্চিত করতে মন সায় দিচ্ছিল না। মানব বা হাতি সমাজে হয়তো আমি খারাপ হিসেবে নিন্দিত হবো। কিন্তু ভাবুন তো, এমনটা করতে পারলে চামচিকা সমাজে কিন্তু প্রাতস্মরণীয় হয়ে থাকার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে যেত।
যাক আমার চামচিকাসুলভ ভাবনা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পরক্ষণেই মনে হয়েছে, আমি তো মানুষ, আমার ভাবনাগুলোও তো মানবিক হওয়া দরকার। প্রথম কাজ হলো হাতিটিকে উদ্ধার করা। ইতোমধ্যে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে সংশ্লিষ্ট লোকজন গেছেন খেরুয়ার চরে। ভারতের আসাম থেকেও একটি প্রতিনিধি দল এসেছে হাতিটিকে ফিরিয়ে নিতে। তার মানে প্রমাণিত হলো সবাই আমার মতো খারাপ নয়। হাতি কাদায় পড়লে তার পাশে দাঁড়ানোর মতো, তাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার মতো লোক আছে। তেমন ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। আমার মতো খারাপ লোক কম বলেই চামচিকারা সুবিধা করতে পারে না। আর সুযোগ পেয়ে যত লাথিই মারুক চামচিকার কোনো দাম নেই। হাতি মরলেও লাখ টাকা।
আমি জানি আপনারা কেউই আমার মতো নন। আপনারা চাইবেনই না যে কোনো মানুষ বা হাতি বা কোনো প্রাণী বিপদে পড়ুক। আর ভুল করে পড়ে গেলেও আপনারা তার পাশেই দাঁড়াবেন। এ কারণেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
এই যেমন, একদা প্রভাবে হাতি পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার এখন কাদায় পড়েছেন। চারদিক থেকে চামচিকারা সব ধেয়ে আসছে। বাবুল আক্তার প্রসঙ্গে আরেকটা গ্রাম্য প্রবাদ মনে পড়ে গেল, ‘বউ মরে ভাগিত্যার, গরু মরে আভাইগ্যার’। মানে হলো, ভাগ্যবানের বউ মরে, দুর্ভাগার গরু মরে। অবশ্য বাবুল আক্তারের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ সত্যি হয়নি। কোনো ভাগ্যের দেখা পাননি তিনি। বরং চাকরি হারাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে, সামনে ঝুঁকি আছে মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোরও। আহারে বেচারা, বাবুল আক্তার সত্যিই গভীর কাদায় পড়েছেন।
লেখক : অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
ই-মেইল : ঢ়ৎড়নযধংয২০০০@মসধরষ.পড়স